শিক্ষার গুণগত মান

ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও |

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার এবং জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় হয়ত কিছুটা কমেছে- কিন্তু কারও মনে কোনো প্রশ্নের জন্ম দেয়নি। বরং এ ফলকে মেধাবী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। বলা যায়, দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ও পাবলিক পরীক্ষার প্রতি সরকার জনমনে আবার সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। বিষয়টিকে শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

শুধু পাসের হার বৃদ্ধি নয়, বরং শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন যে সচেতন মহলের সবার কাম্য তা এবারের এইচএসসি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। বস্তুত গত তিন চার দশকে আমাদের দেশে সচেতন ও শিক্ষিত অভিভাবকের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাত্ গত ষাট-সত্তরের দশকের দিকেও যেখানে শিক্ষার প্রতি অধিকাংশ অভিভাবকের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যেত- বর্তমানে সে অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন শিক্ষার্থী, অভিভাবকগণসহ গোটা সমাজ ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে খুবই সচেতন। শুধু পড়ালেখার মধ্যদিয়েই যে সন্তানের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব- সে সত্যটা সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই বলব, এই সচেতনতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন করার দিকে সরকারকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এবং এবারের এইচএসসি পরীক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সরকার যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, তা আগামী সকল পাবলিক পরীক্ষায় ধরে রাখতে হবে।

এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সরকারের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছে- সেটা হলো ভালো রেজাল্ট করতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বইমুখী ও ক্লাসমুখী হতে হবে অর্থাত্ তাদের কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মধ্যদিয়ে জ্ঞান অন্বেষণে মনোনিবেশ করতে হবে। এবং পরীক্ষার আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পেয়ে ভালো রেজাল্ট তৈরি করার আশা একেবারে পরিত্যাগ করতে হবে। সত্য কথা বলতে কী- অসদুপায় অবলম্বন করে হয়তবা একটি বা দু’টি পরীক্ষায় ভালো ফল তৈরি করা যায় কিন্তু মনে রাখতে হবে জীবনে সফল হতে হলে অসংখ্য পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। তাই জীবনে সফলতা পেতে হলে অসদুপায় অবলম্বনের আশা পরিত্যাগ করে কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান চর্চায় মনোনিবেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো শিক্ষার্থী যদি সাময়িকভাবে ব্যর্থও হয় তবে সে ব্যর্থতাই তাকে ভবিষ্যত্ সফলতার সিঁড়ি নির্মাণ করে দেবে। কেননা কোনো পরিশ্রমকে সৃষ্টিকর্তা বৃথা যেতে দেন না।

আমাদের অভিভাবকেরাও অনেকসময় তাদের সন্তানদের একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দেয়। তারা তাদের সন্তানকে যেকোনো উপায়ে জিপিএ-৫ ধারী রূপে দেখতে চায়। এজন্য তারা অনেকসময় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র সন্তানদের হাতে তুলে দিতে বিন্দু পরিমাণ কুণ্ঠা বোধ করছে না কিংবা নোট বই, গাইড বই এবং কোচিং সেন্টারের সাহায্য নিয়ে খুবই অল্প পরিশ্রমে ভালো ফল তৈরি করাকে অবলীলাক্রমে সমর্থন করে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে সন্তানদের ভালো ফল-ই যেন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য না হয়। সন্তানেরা নৈতিক মূল্যবোধ সম্বলিত মানুষ হয়ে উঠছে কিনা, তাদের মধ্যে কঠোর পরিশ্রম করার মনোবৃত্তি জাগ্রত হচ্ছে কিনা এবং তারা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান পূর্ণভাবে অর্জন করছে কিনা- এ বিষয়গুলো অভিভাবকদের নজরদারিতে থাকতে হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও যথাযথ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাত্ ক্লাসরুমে নিয়মিত পাঠদান করা হচ্ছে কিনা, সিলেবাস শেষ করা হচ্ছে কিনা- এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে- তারা বাসার কাজ, শ্রেণির কাজ করছে কিনা, ক্লাস পরীক্ষা ও ল্যাবের কাজগুলো ঠিকমতো করছে কিনা তার জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই ক্লাসরুমমুখী হবে। এক্ষেত্রে সরকারকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে নোট বই, গাইড বই এবং কোচিং সেন্টারগুলোর যে দৌরাত্ম্য তার রাশ টেনে ধরতে হবে। শিক্ষাকে কোনো শিক্ষক কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত করতে না পারে সে জন্য নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি শিক্ষার গুণগত মান ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

 

লেখক: অধ্যক্ষ, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033578872680664