শিক্ষার স্বপ্ন পূরণে প্রাথমিক শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড জরুরি

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ব্যতিরেকে স্বাভাবিকভাবে কোন কাজ যথাযথভাবে করা সম্ভব নয়। এই সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। পাশাপাশি পেশার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাও অনস্বীকার্য। শিক্ষার্থীর পাঠে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শিক্ষার্থীকে সন্তানতুল্য ভাবাটা অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ। তদ্রুপ মহাপরিচালক, সচিব, মন্ত্রীসহ খোদ সরকার প্রধান পর্যন্ত, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের প্রতি ভালবাসা কানায় কানায় পূর্ণ থাকতে হবে। এ ভালোবাসা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়। বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে  ১ হাজার বিদ্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন- তাকে সাধুবাদ । এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ শিশুদের প্রতি তাঁর ভালোবাসারই উজ্জল দৃষ্টান্ত। 

উল্লেখ্য যে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ৪ হাজারেরও অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকদের যোগ্যতা, সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার প্রমাণ,  বিদ্যালয়ের নামে জমি রেজিষ্টি, চাহিদা মোতাবেক শিক্ষার্থী, খেলার মাঠ ইত্যাদি যথাযথ থাকার পরেও ১ হাজার বিদ্যালয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এতে সরকারের অর্থ সাশ্রয়ী হবে। এদিকে দীর্ঘ ৩ বছর পর ৩৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কৃতিত্ব বেশ জোরেশোরেই প্রচার করা হচ্ছে। অথচ ১/২ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে দেশের বেশকিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়। চরম শিক্ষক সঙ্কটে চলছে সুনামগঞ্জ জেলাসহ সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা। বর্তমান সরকারের প্রাথমিকের ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ফলে এ চিত্র শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি হয়ে ফুটে উঠছে।

নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে বেসরকারি শিশু শিক্ষা ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষকতা করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে নানাভাবে অকার্যকর করার অপচেষ্টা হয়েছে এবং হচ্ছে। শিশু শিক্ষায় সময়সূচি, মূল্যায়ন ব্যবস্থা, বাৎসরিক ছুটিসহ বেতন বৈষম্য শিক্ষকদের মানসিক ভাবে অসুস্থ করে ফেলেছে। অপরদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অসহনীয়ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষকদের কর্মস্পৃহা অস্বাভাবিকভাবে লোপ পেতে শুরু করেছে। 

প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সম্মানিত অবস্থানে রয়েছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমস্যা সমাধান না করে বরং নতুন করে জট-পাকিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানসিক যন্ত্রণার মাঝে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। ইদানিং ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ১৬ তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডের প্রস্তাব শিক্ষকদের ক্ষত-বিক্ষত শরীরে লবন ছিটা দিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলা হচ্ছে। কারো বেতন বৃদ্ধিতে শিক্ষক সমাজের কোন ক্ষোভ নেই। তবে ১৬ তম গ্রেডের কর্মচারীকে  ১০তম গ্রেডে পদায়ন করে ১৩ ও ১১ তম গ্রেডের শিক্ষকদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব কতোটা মর্যাদাহানিকর তা ভেবে দেখার দাবি রাখতে পারে বলে মনে করেন সমাজ সচেতন নাগরিক সম্প্রদায়।  

প্রাথমিক শিক্ষদের ওপর নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নিষ্টুরতম প্রেমের দৃষ্টান্ত :  ১. প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা : স্নাতক সমমান (২য় বিভাগ) বা সমমান বেতন গ্রেড ১৩ তম, যেখানে অষ্টম শ্রেণি পাস ড্রাইভার ভাইদের বেতন গ্রেড ১২ তম। ২. সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা : স্নাতক সমমান, বেতন গ্রেড : ১০ম । ৩. পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ যোগ্যতা : স্নাতক বা সমমান, বেতন গ্রেড : ১০ম। ৪. নার্সদের নিয়োগ পদে যোগ্যতা: এইচএসসি (ডিপ্লোমা ইন নার্সিং), বেতন গ্রেড ১০ম)। ৫. উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পদে নিয়োগ যোগ্যতা : এসএসসি (৪ বছরের কৃষি ডিপ্লোমা), বেতন গ্রেড : ১০ম। ৬. একই সিলেবাস ও একই শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা : স্নাতক (দ্বিতীয় শ্রেণি), দেড় বছরের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডিইনএড), বেতন গ্রেড : ১০ম। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক (২য় বিভাগ) সমমান হলেও ১০ম গ্রেড পেতে শুধুমাত্র আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা। তাদের দেয়া হচ্ছে ১৩তম গ্রেড। এ গ্রেডও অনেক আন্দোলন করে আদায় করতে হয়েছে। শুধু প্রাথমিক শিক্ষকেরা শিক্ষা ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের মর্জির ওপর চলছে । এ চলায় যেন কোনো ক্লান্তি নেই- শেষও নেই।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। পড়াশোনা শেষ করে মহৎ পেশায় নিয়োগ পাওয়া একজন সহকারী শিক্ষক ১৩ তম গ্রেডে ১১ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। মাসিক এ বেতনে সংসার চালানো কতোটা কঠিণ তা সকলেরই জানা। অনেক ক্ষেত্রে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে এইসব শিক্ষকদের হতাশা ও মনোকষ্ট নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। মাসিক এ বেতন দিয়ে কখনো উন্নত জীবনতো দুরের কথা, স্বাভাবিক জীবনও সম্ভব নয়। আর এ কারণেই মেধাবীরা প্রাথমিকে শিক্ষকতা পেশায় না এসে অন্য পেশায় ছুটছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে উন্নত, সুখী, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের যোগ্য ও স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিকের শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরি।  

প্রাথমিকের সহকারী ১০ম গ্রেড বেতন প্রাপ্তির সঙ্গে পুরো প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের ভবিষ্যৎ জড়িত। সহকারী শিক্ষকরা ১০তম গ্রেড পেলে পুরো প্রাথমিক শিক্ষার মাঝে স্মার্টনেস আসবে। মেধাবীরা এ পেশা ত্যাগ না করলে মেধাবীদের আলোতে আলোকিত হবে শিক্ষার্থী তথা আগামী প্রজন্ম। প্রাইমারী শিক্ষার মাঝে প্রায় মরি-মরি ভাব দূর হয়ে শিক্ষার সুবাতাসে আলোকিত হবে শিশু শিক্ষা। প্রধান শিক্ষকসহ সকল কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি ও মর্যাদার সুবাতাস বইবে।  তৃণমূল থেকে ধাক্কা খেলে সবার পরিবর্তন আসতে বাধ্য। সে প্রেক্ষাপটে মন্ত্রণালয়সহ সর্বত্র স্মার্ট প্রাথমিক শিক্ষা গঠনে সহযোগীতার মনোভাব আজকের দিনের প্রত্যাশা। প্রধান শিক্ষক কর্মকর্তা যৌথভাবে প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্খিত উন্নয়ন ও শিক্ষক সমাজকে অন্যান্যদের মতো স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকাসহ মানসিক সুস্থতার জন্য সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দাবির প্রতি আন্তরিক সমর্থন কাম্য। 

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও 
সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষাডটকম

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024628639221191