শিক্ষা অধিদপ্তরের সেই বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

আশিক মাহমুদ/বদরুল আলম শাওন/তানজিলা খানম |

শিক্ষা অধিদপ্তরের সেই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ মে) অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে ১৯৬৫ টি পদে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগের সেই পরীক্ষা দুটি বাতিলের কথা বলা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়েছে, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং অধিদপ্তরাধীন বিভিন্ন অফিস/শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১ হাজার ৯৬৫টি শূন্য পদ পূরণের লক্ষে ২০১৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় শ্রেণি এবং ২০১৩ সালের জুন মাসের ২১ তারিখে চতুর্থ শ্রেণির লিখিত পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হয়। এই পরীক্ষা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বাতিল করা হলো। পূর্বের আবেদনকারীদের প্রার্থীতা বজায় রেখে অবিলম্বে পুনরায় লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এই লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।”

অভিযোগ রয়েছে, প্রায় একশ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেন হয় স্মরণকালের বৃহত্তম ওই নিয়োগ নিয়ে, যদিও শেষ পর্যন্ত কেউ নিয়োগ পেল না। শিক্ষা বিষয়ক একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক শিক্ষায় নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের খবর প্রকাশ হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। টনক নড়ে উচ্চমহলের। স্থগিত হয়ে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া।

২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ও ২১ জুন নেয়া হয় পরীক্ষা দুটি। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির কয়েকজন  পরাজিত নেতা পরীক্ষা সংক্রান্ত কেউ না হলেও ঢাকা কলেজে বসে নিয়োগ পরীক্ষা প্রশ্নপত্র তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে। দুদকের টিঠিতেও সমিতির কথা উল্লেখ রয়েছে।

২০১২ সালের মার্চে এক হাজার ৯৬৫ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শিক্ষা অধিদপ্তর। আবেদন করেছিলেন এক লাখ ৭৬ হাজার। উচ্চমান সহকারী পদে ২০১৩ সালের ১৪ জুন ৩৯টি কেন্দ্রে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। অন্যান্য পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ওই মাসের ২১ তারিখ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

জালিয়াতি হয়েছে সন্দেহে ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ পাবলিক সার্ভিস কমিশন লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করতে বলেছে। প্রশ্নপত্র তৈরিতে অস্বচ্ছতা এবং ওএমআর শিট স্ক্যানিংয়ে অসামঞ্জস্য থাকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য বিভাগের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বিভাগীয় সিলেকশন কমিটিও পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করে।

২০১৫ সালের ৯ মার্চ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে বলে, লিখিত পরীক্ষার পর ফলাফল প্রস্তুতের জন্য উত্তরপত্রগুলো ঢাকা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্টের দপ্তরে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওই কাজ স্থগিত করা হয়, পরে আবার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন ওই কার্যক্রম স্থগিত করল আর কেনই বা আবার চালু করল তা স্পষ্ট নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা যেতে পারে, নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। অতএব নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করা হোক।

২০১৫সালে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পিএসসির প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি পিএসসিতে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, লিখিত পরীক্ষার ওএমআর উত্তরপত্র স্ক্যানিং করার জন্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্টের দপ্তরে গিয়ে তিনি জেনেছেন, ২০১৩ সালে স্ক্যানিং করা ৮৬ হাজার ৩২১টি ওএমআর উত্তরপত্রের মধ্যে ৯৪টি ওআরএম উত্তরপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নিয়োগ কমিটির সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তিনি নতুন যোগ দিয়েছেন, তাই কিছু বলতে পারছেন না। পরে বিষয়টি নিয়ে আবার সভাপতির সঙ্গে কথা হয়। তখনো তিনি জানান, হারিয়ে যাওয়া ৯৪টি ওআরএম উত্তরপত্রের কোনো সুরাহা হয়নি। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভায় আলোচনা হয়নি। পিএসসির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ধারণা করা যায়, লিখিত পরীক্ষায় জালিয়াতির সুযোগ কাজে লাগানো হয়েছে। এ কারণে পরীক্ষা করা উচিত।

বিষয়টি নিয়ে সরব ছিল দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দিয়ে এ-সংক্রান্ত তথ্য চায় দুদক।

দুদকের চিঠিতে নিয়োগ বাণিজ্যে বিসি এস সাধারণ শিক্ষা সমিতির জড়িত থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে। চিঠির কপি দৈনিক শিক্ষা ডটকমের হাতে রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056388378143311