দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সেক্টর দেখভালের দায়িত্বে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষক নিয়ন্ত্রিত এ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আছেন শিক্ষা ক্যাডাররাই। তবে শিক্ষা ক্যাডারের একাংশই এ দপ্তর নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবি তুলেছেন।
বিভিন্ন সরকারিকৃত কলেজের আত্তীকৃত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকরা এ দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, সরাসরি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষা
তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৬৩টি বেসরকারি কলেজ সরকারি ঘোষিত হয়। ওই কলেজগুলোর শিক্ষকরা ২০০০ বিধিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকৃত। বেসরকারি সময় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপক পদে থাকলেও ওই বিধিতে সবাই প্রভাষক পদে আত্তীকৃত হয়েছেন। যা এক হাজার নয়শ’র বেশি শিক্ষক মাথা পেতে নিয়েছি। তবে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ও নিরুপায়। জাতীয়করণকৃত কলেজ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী আত্তীকৃত বিধিমালা-২০০০ এ আত্তীকৃত বিভিন্ন সরকারিকৃত কলেজের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা জাতীয়করণের তারিখ থেকে চাকরি নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণসহ সব সুবিধা পাচ্ছেন। তবে একই বিধিতে আত্তীকৃত ও নিয়োগ পেয়ে যেসব কলেজ শিক্ষক ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি, তাদের নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতিসহ সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের চাকরি এসব সুযোগ-সুবিধার প্রস্তাব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে পাঠায় না।
তারা আরো বলেন, সরকারিকরণের আগে আমরা অনেকে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহযোগী অধ্যাপক ছিলাম। আমাদের অনেকের সরাসরি ছাত্র সরসরি শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে একই কলেজে পদায়ন পেয়ে নিজের শিক্ষকদের থেকে সিনিয়র হয়ে গেছেন। স্থায়ীকরণ, নিয়মিতকরণ প্রক্রিয়া আটকে রাখায় বহু শিক্ষক এসব সুবিধা না পেয়েই অবসরে যাচ্ছেন। ফলে শিক্ষকরা অবসরের পর অর্ধেকেরও কম আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। আর হয়রানিমূলক আচরণ করায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের স্থানে নিরপেক্ষ প্রশাসন ক্যাডার পদায়ন করার দাবি জানিয়েছি।
আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক ফোরাম (বাসকশিফো) শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন দেয়ার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংগঠনটির নেতারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। আরো বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এসব দাবিতে স্মারকলিপি দেবেন তারা।
জানতে চাইলে বাসকশিফোর সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সরাসরি শিক্ষা ক্যাডারে প্রবেশ করা কর্মকর্তারা আত্তীকৃতদের সঙ্গে বিমাতা সুলভ আচরণ করেন। শুধু শুধু হেয়ে প্রতিপন্ন করা হয়। নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ না হওয়ায় আমরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষকরা। আমরা এ অবস্থার প্রতিকার চাই। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের সব অর্জন ও সাফল্যকে পেছনে ফেলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ চক্রটি সরকারি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলে তা দিয়ে মামলা-মোকদ্দমা, মিছিল, সমাবেশ ইত্যাদি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জাতীয়করণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে চলছে। তারা জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাকে ধ্বংস করে সরকারের ভিশন-২০৪১ এর মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে চায়। সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এসব রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী কর্মকর্তাদেরকে চিহ্নিত করে অধিদপ্তর থেকে বের করে শিক্ষা অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন দাবি করছি। এ দাবি জানিয়ে বেশ কয়েকজন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি জমা দেয়ে হয়েছে। রোববারও কয়েকজন ডিসির কাছে এ স্মারকলিপি দিয়েছি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে সব অভিযোগ তুলে ধরবো।
তিনি আরো বলেন, আত্তীকরণের ১০ বছর পার হলেও অধিকাংশ শিক্ষকের চাকরি নিয়মিতকরণ করা হয়নি। প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা অর্জন এবং তাদের বয়স পঞ্চাশোর্ধ হলেও বছরের পর বছর ধরে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। জুনিয়ররা পদোন্নতি পেলেও আত্তীকৃত যোগ্য সিনিয়র শিক্ষকদেরকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। ২০০০ বিধি মানছেন না। এসবের প্রতিকার চেয়ে বিধিসম্মতভাবে সুনির্দিষ্ট অধিকার পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও কোনো সাড়া মিলছে না। সময়ক্ষেপণ করায় ইতোমধ্যৈই অসংখ্য শিক্ষক নিয়মিতকরণ, স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি ছাড়াই চাকরিজীবন শেষ করে খালি হাতেই অবসরে চলে যাচ্ছেন। সমস্যা সমাধানে ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।
এদিকে সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষকদের শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত করাকে ‘শিক্ষা ক্যাডারের পদ দখল’ বলে আখ্যায়িত করেছে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছেন সমিতির নেতারা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা ক্যাডার নিয়ন্ত্রিত থাকলেও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরেও তারা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নের দাবি জানিয়েছিলেন। একইসঙ্গে পদোন্নতির জটিলতা নিরসন, সুপার নিউমেরারি পদে পদোন্নতিসহ নানা দাবিতে তারা কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন। তবে গত শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার চ্যানেলের সাথেই থাকুন।ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।