শিক্ষা আইনের খসড়া প্রণয়নে দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নিষিদ্ধ নোট-গাইড ব্যবসায়ী ও কোচিং সেন্টার মালিকদের চাপে শিক্ষা আইনের খসড়া ফের রিভিউ করা হচ্ছে। ২০১১ থেকে এখন পর্যন্ত ৯ বছরে শিক্ষা আইনের খসড়া বারবার সংযোজন-বিয়োজন হচ্ছে। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত আমলে না নিয়েই খসড়া রিভিউর কাজটি করা হয়েছে। তিনবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আইনটি আলোচনায় এসেছিল। কিন্তু খসড়ায় নানা অসঙ্গতি থাকায় সেখান থেকে ফেরত দেয়া হয়েছে। আইন বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যেই এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে খসড়ায় বারবার অসঙ্গতি রাখছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এসইডিপি প্রকল্পের সভাকক্ষে ফের নতুন করে আইনটি রিভিউ করার জন্য সভা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কথা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

জাতীয় নীতি বাস্তবায়নের জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে জরুরি সেই শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ ঝুলে আছে প্রায় ৯ বছর। অথচ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের নীতিতেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে শিক্ষা আইন প্রণয়নের কথা। ২০১১ সালে শিক্ষা আইনের একটি খসড়া প্রস্তুত হলেও এখন পর্যন্ত আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং নোট-গাইড, কোচিং সেন্টারসহ শিক্ষা বাণিজ্যে যুক্ত বিশেষ গোষ্ঠীর দাপটে পিছু হটে মন্ত্রণালয় দুর্বল আইন প্রণয়নের পথেই হেঁটেছে। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।

মূলত খসড়া প্রণয়নে দূরদর্শিতার অভাব, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের ধারা বিবেচনায় না নেয়া, শিক্ষাবিদদের মতামত উপেক্ষা ও খসড়া প্রণয়নকারীদের গাফিলতিতেই শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। আইন ঠেকাতে নোট-গাইড ব্যবসায়ী ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত সিন্ডিকেট একজোট হয়ে কাজ করছে। এ চক্র যে কোন মূল্যে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন থেকে নিজেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ধারা-উপধারাগুলো বাদ রাখতে সংকল্পবদ্ধ। কিছু আমলাও বছরের পর বছর ধরে এদের হয়ে কাজ করেছেন।

প্রশ্ন হলো, সরকার কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখানে কি করছে। তাদের অবস্থান কী জনগণের পক্ষে নাকি মুনাফাখোর অসৎ ব্যবসায়ীদের পক্ষে? যদি জনগণের পক্ষেই সরকারের অবস্থান হয় তাহলে আইনের খসড়া প্রণয়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণ কি? এ দীর্ঘসূত্রতার কারণে জাতীয় নীতি বাস্তবায়নের পথটি যে রুদ্ধ হচ্ছে, অগণিত শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন যে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার দায় কে নেবে? অবশ্য এর আগেও আমরা দেখেছি সড়ক আইন প্রণয়ন করেও পরিবহন খাতের মাফিয়াদের চাপে আইনটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর ফলে সড়কে জননিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। শিক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও যদি একই ধরনের কারসাজি চলে তবে এটাই ধরে নিতে হবে যে, শুধু মুনাফাখোর, মাফিয়াদের স্বার্থরক্ষাই সরকারের দায়, জনগণের মঙ্গল সাধন করা কিংবা জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়।

আইন প্রণয়নে দীর্ঘসূত্রতা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। খসড়া আইনে কোন ধরনের অসঙ্গতি থাকলে সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। এবং দ্রুততার সঙ্গেই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। কিন্তু তা না করে যদি মাফিয়া ব্যবসায়ীদের কথামােতই সংযোজন-বিয়োজন চলে তবে আইনের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে, শিক্ষানীতি জনকল্যাণকর হবে না। আমরা আশা করব, বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই বিবেচনা করা হবে। কোন অশুভ চক্রের স্বার্থরক্ষায় রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহৃত হবে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024960041046143