শিক্ষা আইনের খসড়া : বিদ্যাবাণিজ্যে সরকারি মোহর

আমিরুল আলম খান |

শিক্ষা লইয়া আমাদের চর্চা শেষ হইল না। কবে হইবে, আদৌ হইবে কি-না তাহা কেবল আল্লাহ মাবুদ জানেন। এদেশে বণিককুলের জন্য জানপরান উজাড় করিয়া দেবার লোকের অভাব নাই। শিক্ষা আইনের খসড়া তাহা আবারো প্রমাণ করিল। কত কাল ধরিয়া দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাগণ শিক্ষা আইন বানাইতেছেন তাহা জানিতে হইলে ইতিহাস খুলিতে হইবে। আপাতত তাহা হইতে বিরত রহিলাম। শুধু দৈনিক শিক্ষাডটকম শিক্ষা আইনের যে খসড়ার সারমর্ম প্রকাশ করিয়াছে তাহা লইয়া দুয়েক কথা না বলিলে নয়। অনলাইন এই পত্রিকাটি পাঠে জানিলাম, আমাদের বিজ্ঞ শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা আইনের এক জবরদস্ত খসড়া করিয়াছেন। মোটা অঙ্কের টাকায় পরামর্শকও ভাড়া কারিয়াছেন। 

“শিক্ষা আইনের খসড়াঃ শিক্ষকদের কোচিং-টিউশন বন্ধ হলেও চলবে বাণিজ্যিক কোচিং শিরোনামের দৈনিক শিক্ষার সংবাদটি এতই স্পষ্ট যে অন্দরের সকল বদমতলব প্রকাশ হইয়া গিয়াছে। শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্য বানাইবার সদর দরজা তাহারা বহু পূর্বে খুলিয়া দিয়াছিল। এবার তাহাতে আইনের মোহর লাগাইয়া জায়েজ করিতেছে। বাংলাদেশে বিদ্যাবাণিজ্য এতই লাভজনক হইয়া উঠিয়াছে যে, জনৈক বুয়েট প্রকৌশলী সে বাণিজ্যে সকলকে টেক্কা দিয়া শত শত কোটি টাকার মালিক বনিয়াছেন। তাহার সোহাগ এতই প্রবল যে সারা জাহান বিদ্যায় উদ্ভাসিত। সারাদেশে তাহার বাণিজ্যের নাম ছড়াইয়া পড়িয়াছে। পত্রপত্রিকা, টিভি সকল মাধ্যমে বিস্তর অর্থ ব্যয় করিয়া প্রতিদিন সতের কোটি মানুষের নিকট তাহার বাণিজ্যসংবাদ পৌঁছাইয়া যায়। দেশ জুড়িয়া তাহার হাজার হাজার বরকন্দাজ অহরহ সোহাগ-গুণকীর্তনে ব্যস্ত। তাহাতে ভোলে না এমন এমন বোকা এ মুলুকে নাই। হাত খরচের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা তাহার দোকানে গিয়া বিষয়ভিত্তিক কিছু বাক্য উগড়ে দিয়া আসাকেও শিক্ষকতার সমমান জ্ঞান করিয়া থাকেন তিনি।  

বহুকাল যাবৎ শুনিতেছিলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাহার ভীষণ কদর। কিন্তু একটি আইনী উর্দি না থাকায় মাঝেমধ্যে বেতমিজ কিছু লোক তাহার নিন্দাবাদ করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তাহার তদবির যে বহু তঙখার হইবে তাহাতে সন্দেহ নাই। বলা যায়, এবার তিনি উহা হাসিল করিয়াই ছাড়িবেন।

আমাদের বিজ্ঞ শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল শিক্ষকগণের বেতন দিতে অপারগ হইলে কী হইবে, শাসন করিতে ওস্তাদ বটে। স্কুলে (পড়ুন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়) কোন শিক্ষক অর্থের বিনিময়ে কোচিং, টিউশনি করিতে পারিবে না। কিন্তু নিজ স্কুলের পড়ুয়া না হইলে যে কোন বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারে যে কেহ অর্থের বিদ্যার জাহাজ বানাইবার ঠিকাদার হইতে পারিবে। এ জন্য খোদ শিক্ষা আইন তাহাদের রক্ষাকবচ দিবে এবং তাহারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত হইবেন। লাইসেন্সধারীর গায়ে হাত তুলিবে এমন মরদ বাঙ্গালা মুলুকে জন্মে নাই।

আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আসল মতলব বুঝিয়াছি। এখন লাইসেন্সধারী বিদ্যাবণিকের গোষ্ঠী দেশে শিক্ষার একচেটিয়া বাণিজ্য করিবার মৌরসীপাট্টা পাইবে। তাহাতে প্রমাণ করা যাইবে, বাঙালি ধনী বটে, প্রাইমারি হইতে বিশ্ববিদ্যালয় তক বিদ্যা তাহারা অর্থ বিনিয়োগ করিয়া কিনিতে সমর্থ।

আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সাধুবাদ দিব। অন্তত বাঙালি জাতিকে তাহারা মিসকিন বদনাম হইতে রক্ষা করিতেছেন। এই আইন বাঙালি জাতিকে ইলেমদার করিতে না পারুক, মিসকিন নাম তো ঘুচিবে! তাহাই বা কম কিসে?

লেখক: আমিরুল আলম খান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান । 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029199123382568