রাজশাহী সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদা আরার বিরুদ্ধে শিক্ষা উপকরণ কেনাকাটার নামে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন খাতের টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করছেন তিনি।
জানা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০টি কম্পিউটারের দুইবার মেরামত দেখানো হয়েছে। হার্ডডিস্ক কেনাসহ মোটা অঙ্কের টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান বিষয়গুলোর জন্য উচ্চ মূল্যে সরঞ্জামাদি কেনা ও শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে প্রশ্ন তোলায় দুজন শিক্ষককে এরই মধ্যে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গবেষণার সরঞ্জামাদি বাবদ চলতি বছরের ২১ এপ্রিল এক লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু গবেষণাগারে জিনিসপত্র না কিনে ভুয়া ভাউচার করে সেখানে কমিটিতে থাকা শিক্ষকদের স্বাক্ষর দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষক। এতে বেঁকে বসেন তিন শিক্ষক। পরে ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক উম্মুল ওয়ারা মুক্তির স্বাক্ষর নিয়ে অন্য তিন শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে ট্রেজারি থেকে টাকা তোলা হয়। এর বিরোধিতা করায় ওই তিন শিক্ষকের মধ্যে উত্তম কুমার সরকারকে প্রতিষ্ঠান থেকে বদলি করা হয়।
সূত্র মতে, বিধি মোতাবেক চার সদস্যবিশিষ্ট ক্রয় কমিটিতে ওই স্কুলের শিক্ষক উম্মুল ওয়ারা মুক্তিকে আহ্বায়ক করে উত্তম কুমার সরকার, জান্নাতুল কাউসারি ও সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক নাসরিন বেগমকে রাখা হয়। তবে উম্মুল ওয়ারা মুক্তি বাদে বাকিরা জানতেন না তাঁদের নাম কমিটিতে আছে। এ ছাড়া আসবাব মেরামত বাবদ এক লাখ টাকার আত্মসাতের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গত ১৫ ও ১৬ মে বিদ্যালয়ের উভয় শিফটের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় পিরিয়ডে ছুটি দেয়া হয়। তবে ওই দুই দিনের টিফিন দেয়া হয়েছে বলে ভাউচার করা হয়। পরে সেই টাকাও উত্তোলন করা হয়। অথচ ওই দিন কোনো টিফিন দেয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, অনেক সময় শিক্ষা উপকরণ না কিনেই ভুয়া ভাউচার তৈরি করেন প্রধান শিক্ষক। পরে জোর করে ক্রয় কমিটিতে থাকা শিক্ষকদের স্বাক্ষর নেন। আবার স্বাক্ষর না দিলে জাল স্বাক্ষর বানিয়ে নেন। এভাবে তিনি বিদ্যালয়ের লাখ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা টিফিনের টাকাও আত্মাসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদা আরা বলেন, ‘আমার সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন্ন করার জন্য একটি শ্রেণি আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। আমার কাছে কেনাকাটার প্রমাণাদি আছে। ক্রয় কমিটির চাহিদামতো কেনাকাটা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনিয়মের কোনো সুযোগ নাই। আমার বিশ্বাস, সত্য ঘটনা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে।’