শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিপদে শিক্ষকরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) সাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অত্যাচার ও ঘুষ-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করে বিপদে পড়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পর ওই শিক্ষা কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুলে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকদের চাকরি ‘খাওয়ার’ হুমকি দিচ্ছেন। বিনা কারণে শিক্ষকদের নোটিশ (শোকজ) দিয়ে হয়রানি করছেন।

গত রবিবার সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা।

রৌমারী উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ৮০ জন শিক্ষক একত্রিত হয়ে গত ১৫ জানুয়ারি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর। অভিযোগে বলা হয়, সাহেদুল ইসলাম সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ না দিয়ে বরাদ্দকৃত টাকা ভুয়া বিল-ভাউচারে আত্মসাৎ, ক্লাস্টারের আওতায় শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে তারিখ ও শিডিউলবিহীন কাগজে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন, শিক্ষকদের নৈমিত্তিক ও চিকিৎসার জন্য ছুটি দিতে ঘুষ নেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে ভুয়া পরিদর্শন প্রতিবেদন দেন, শ্রেণি পাঠদানে কোনো পরামর্শ না দিয়ে বদলি ও ডেপুটেশন (প্রেষণ) দেওয়া ও চাকরিচ্যুতের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়সহ অকারণে শিক্ষকদের হয়রানি করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে স্লিপ কার্যক্রমের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সময় দুর্নীতি করেন। এ কার্যক্রমের আওতায় ওয়েট অ্যান্ড হাইট মেশিন, সাউন্ড বক্স যেসব পুরাতন, কাজ করে না সেগুলো ব্যবহারে বাধ্য করেন সাহেদুল। স্লিপ বাস্তবায়ন কার্যক্রম পরিকল্পনার ছক নিজের মতো করে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে জোর করে এক হাজার টাকা করে নেন। কাবস্কাউট প্রতিজ্ঞা আইন ও মটো ব্যানারপ্রতি ১০০ টাকা খরচ করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে আদায় করেন এক হাজার টাকা করে। বিদ্যালয়ে এসএমসি গঠনের ব্যয়ভার বহনের নামে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছ থেকে ঘুষ নেন তিনি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশে লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মবেজ উদ্দিন সরেজমিনে তদন্ত করতে গত ৩ জুলাই রৌমারীতে আসেন। এ সময় অভিযোগকারী সব শিক্ষক অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ তুলে দেন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সত্যতা পাওয়া গেছে। পরে তিনি অভিযোগের তথ্য-প্রমাণসহ প্রতিবেদন দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর। মহাপরিচালক অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাহেদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে জবাব দিতে বলেন।

উপজেলার ঝগড়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল হক বলেন, ‘ওই কর্মকর্তা আমার চাকরি খাবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন। গত ২০ দিনে চারবার আমার স্কুল পরিদর্শনে এসেছেন।’ একই ধরনের অভিযোগ করেন বি-পাখিউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।

বালুর গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা সকাল ৯টার আগেই আমার প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়ে আমাকে নানা হুমকি দেন। সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। আমি রাজি না হলে তিনি আমার চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন।’ শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, সরকারি নিয়ম অনুসারে, শিক্ষা কর্মকর্তা অফিসে উপস্থিত হয়ে উপস্থিতির স্বাক্ষর করে সকাল ১০টার পর যেকোনো প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে যেতে পারেন।

অভিযুক্ত সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে শিক্ষকরা যেসব অভিযোগ করেছেন তা প্রমাণ করতে পারেননি। আমি সরকারি নিয়ম মেনে দায়িত্ব পালন করছি। আর আমি কাউকে হুমকি দিইনি।’ এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মহাপরিচালক আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। আমি তার জবাব দেব।’

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘সাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তাঁর ঘুষ-দুর্নীতির জন্য শোকজ করেছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049149990081787