লাকসামের নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজে শিক্ষক, কর্মচারি, শ্রেণিকক্ষ ও ভৌত অবকাঠামো সংকটসহ নানা সমস্যায় সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ফলে প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা নবাব মহিয়সী নারী নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে এটি প্রথমে হাই মাদরাসা হিসেবে চালু করা হয়। পরে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ডিগ্রি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সুযোগ পান।
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের ১ মে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। এটি লাকসামের একমাত্র সরকারি কলেজ। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই কলেজে স্নাতক (সম্মান) বিভাগ চালু হলেও অবকাঠামোগত তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। বর্তমানে কলেজটিতে সাতটি বিষয়ে অনার্স (সম্মান) কোর্স চালু রয়েছে। বর্তমানে কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৪২৩ জন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে সম্মান বিভাগ চালু হওয়ার কারণে কলেজটিতে প্রদর্শকের পদসহ সর্বমোট ৭৯ জন শিক্ষকের পদ তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও তা আজ পর্যন্ত হয়নি। ফলে সেই পুরনো মঞ্জুরিকৃত ৬৭ জন শিক্ষকের পদই বহাল রয়েছে। আবার ওইসব পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৫৩ জন শিক্ষক।
শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, কলেজটিতে অনার্স (সম্মান) কোর্স চালু থাকায় নিয়মানুযায়ী প্রতিটি বিষয়ে সাতজন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এখনো প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। সৃষ্ট পদের মধ্যে আবার কোনো কোনো বিভাগে একজন শিক্ষকও কর্মরত নেই। ফলে প্রতিটি বিষয়ে জোড়াতালি দিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সমাজকল্যাণ ও সমাজকর্ম এবং কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। ইংরেজিতে প্রভাষকের দুটি পদের একটি শূন্য। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে চারটি পদের দুটিই শূন্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজজ্ঞিান বিভাগে প্রভাষকের দুটি করে পদ। এগুলোও শূন্য রয়েছে। বাংলা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের পদ দুটিও রয়েছে শূন্য। হিসাববিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষকের তিনটি পদের মধ্যে একটি শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা বিষয়ের প্রদর্শকের তিনটি পদে কোনো শিক্ষক নেই।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু হানিফ মিয়াজী জানান, শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকায় এবং শিক্ষক সংকটের কারণে ঠিকমতো অনেক বিভাগের ক্লাসও হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা প্রাইভেট পড়ার প্রতি ঝুঁকছেন।
একাদশ শ্রেণির অপর এক ছাত্রী বলেন, বাংলা ও ইংরেজি ক্লাসের সময় আট থেকে ৯ শ শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে কলেজ মিলনায়তন কক্ষে বসে ও দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হয়। ওই সময় শিক্ষক খুব জোরে চিৎকার করে পাঠদান করেন। মনে হয় যেন কোনো রাজনৈতিক নেতা জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন। এতে সঠিক পাঠ আদান-প্রদানে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মক ব্যাহত হয়। ফলে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছেন।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ইমতিয়াজ আহমেদ সিদ্দিকী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকায় শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট লেগেই রয়েছে।
তিনি আরও জানান, কলেজের পশ্চিমাংশে প্রায় শত বছরের পুরনো ১৪ কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন বহু আগেই পরিত্যক্ত। দেখলে মনে হয়, এ যেন একটি ভূতুড়ে বাড়ি। ওই ভবনটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যা গোটা কলেজের সৌন্দর্যযকে ম্লান করে দিয়েছে। এটি ভেঙে নতুন করে বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করলে শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর করা সম্ভব হবে।