দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার নতুন বার্ষিক সীসার কর্মসূচি (এডিপি) পাস হয়েছে। গতকাল শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি অপেক্ষা মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বেশি, যা শতকরা হারে ১ শতাংশেরও কম। সরকারের ব্যয় সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ করে নতুন এডিপিতে তুলনামূলকভাবে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছে।
এবারের এডিপির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিদেশি ঋণের অংশ বেশি। এর পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে মূল এডিপি ছিল ২লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে দেশীয় অংশের পরিমাণ ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা। পরে এডিপি সংশোধন করে কমানো হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
এডিপি অনুমোদনের পর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম বলেন, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে এবারের এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে। খুব একটা বাড়ানো হয়নি। এতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষি খাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থহীন ও বাস্তবায়নযোগ্য নয় এমন প্রকল্প নেওয়া হবে না। এমন প্রকল্প নেওয়া হবে যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে। পরিকল্পনা কমিশনের ছাঁকনি খুবই শক্তিশালী। তাই মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রকল্প পাঠানো হলে পিইসি সভায় সঠিকভাবে যাচাই করা হয়। অসংগতি পেলে বা বাস্তবসম্মত না হলে তা ফেরত দেওয়া হয়। কোনো মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প এলে আমরা ইআরডিকে ঋণের ব্যাপারে বলে থাকি। তারাই দর-কষাকষি করে ঋণের সুদ ঠিক করে।
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'প্রকল্প অনুমোদনের সময় মেয়াদ নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে রুগ্ন শিল্পের মতো হয়ে যায়। তখন আমরা সেটিকে ধরে ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করি।' আরেক প্রশ্নের উত্তরে এই মন্ত্রী বলেন, একটা প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। প্রকল্পের মান ঠিক হচ্ছে কি না, তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রশ্ন করা দরকার। কোন ত্রুটি থাকলে তার ব্যাখ্যা ওই মন্ত্রণালয় দিতে পারবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, সব মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এটি সফল এনইসি সভা। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এডিপিতে সরকারি অর্থের জোগান ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ ১ লাখ কোটি টাকা। এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে নতুন এডিপির আকার হচ্ছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া সংশোধিত এডিপির তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাজেটের এই আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।
অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১৫টি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সড়ক ও পরিবহন খাতে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা পরিবহনের মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র। এটা মোট বরাদ্দের ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গতবারে ছিল ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে আছে ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা খাতে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এটা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ, যা চলতি সময়ে বরাদ্দ আছে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলিতে ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এটা মোট বরাদ্দের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগে ছিল ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। চলতি বছরে বরাদ্দ বেশি ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ টাকা বা মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চলতি বছরে আছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।
কৃষি খাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এবারে বরাদ্দ ৪ শতাংশ। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৬ হাজার ৪৯২ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ, মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। চলতি বছরে আছে ২ শতাংশের বেশি। ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে ৩ হাজার ৪৯২ কোটি বা ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। বর্তমানে আছে দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় বেশি করে বরাদ্দ চাইলেও এই খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এ খাতে ৩ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি বছরে আছে ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতেও বরাদ্দ কমেছে। এ খাতে ৩ হাজার ৩০৮ কোটি বা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। চলতি বছরে আছে ১ দশমিক ৩১ শতাংশ। ৭১০ কোটি টাকা বা দশমিক ২৭ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে প্রতিরক্ষা খাতেও বরাদ্দ কমানো হয়েছে। কারণ চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে দশমিক ৩৮ শতাংশ। সাধারণ সরকারি সেবা খাতে দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের দশমিক ৮১ শতাংশ। চলতি বছরে আছে দশমিক ৮০ শতাংশ।
নতুন এডিপিতে উন্নয়ন প্রকল্প: আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৩৩৭টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে ১ হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি। চলতি বছরে সর্বোচ্চ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।