শিক্ষা খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম চলছে লাগামহীন

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: পাহাড়সম অনিয়ম আর দুর্নীতি শিক্ষা খাতে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীদের সার্টিফিকেট বাণিজ্য, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিদের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ শিক্ষার এমন কোনো দফতর নেই যেখানে দুর্নীতি নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি-ট্রেজারার না থাকাসহ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি করার কথা থাকলেও তারাও এ কাজ যথাযথভাবে করছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। ফলে অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠগুলোতে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজে অনেকে শিক্ষকই জাল সনদে চাকরি করছেন। এ ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতি তো আছেই। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আকতারুজ্জামান। 

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়,  শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় আছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তত ৩৩টিতে কোনো উপাচার্য নেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন উপাচার্য। আর যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক বিষয় দেখভাল করবেন সেই ট্রেজারার নেই অন্তত ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীর্ষ কর্মকর্তা না থাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক অনিয়ম হচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম চলছে লাগামহীনভাবে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ কর্তাব্যক্তিরা খেয়াল-খুশি মতো বিশ্ববিদ্যালয় চালাচ্ছেন। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম, ঢাকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ড. আবদুর রশীদসহ বেশ কয়েকজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ড. আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে নিয়োগের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ ১০ দফা অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করছে সরকার। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের আগে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া, নিয়োগের আগে চেক ও সিন্ডিকেটের দিনে অর্থ গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসি সূত্র জানায়, এই উপাচার্র্যের বিরুদ্ধে যেসব অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে তা খুবই দুঃখজনক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শিরীন আখতার মেয়াদের শেষ সময়ে এসে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ দেন অন্তত ৩৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল অনেক অনিয়ম-দুর্নীতির। শুধু এই তিনজন নয়, দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। 

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে উপাচার্যদের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পরও কারও বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা। ফলে অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন অভিযুক্ত উপাচার্যরা।

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে প্রতি বছর বিনামূল্যের বই তুলে দেয় সরকার। এ বইয়ের ছাপাকাজেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ রয়েছে ছাপাখানাগুলোর বিরুদ্ধে। আর এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্মকর্তাদের। তবে নিম্নমানের কাজ করলেও তাদের ছাপাকাজ দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাপ থাকে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবি একটি সূত্র।

৫ হাজারের বেশি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্যের অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট এ টি এম শামসুজ্জামানকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে- সম্প্রতি কারিগরি বোর্ডে এই জালিয়াতির খবর চাউর হলেও সনদ জালিয়াতি চলে আসছে অনেক আগে থেকে।

শুধু কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নয়, সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাল সনদ নিয়ে চাকরি করছেন অনেক শিক্ষক। গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) প্রতিবেদনে বলা হয, দেশের ৬৭৮ জন শিক্ষকের জাল সনদের প্রমাণ মিলেছে। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে ডিআইএ।

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতি-অনিয়ম চলছে লাগামহীন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত বছর কয়েক শ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শত শত শিক্ষক-শিক্ষিকা-কর্মচারী। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন হয়েছে প্রশ্নবিদ্ধভাবে এবং অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের ভুয়া সনদধারী, আবার কারও রয়েছে জাল সনদ। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042431354522705