সরকার শিক্ষা খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন একেবারে কম। বাজেটে সামগ্রিক ব্যয় কাঠামো (উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন) বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ কিছু বাড়লেও শতাংশে তা কমেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতেও (এডিপি) কোনো কোনো ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমেছে বা একই আছে।
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আজ বৃহস্পতিবার বলেন, শিক্ষা খাতে কোনোবারই যে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া দরকার, তা দেওয়া হয় না। যেহেতু বাজেটের মোট আকার বেড়েছে, সে জন্য এই খাতেও তা বাড়ে। কিন্তু শতাংশে বাড়েনি। হয়তো অন্য যেসব খাতে বেশি প্রয়োজন, সেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এখন যা দেওয়া হয়েছে, তা যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে। অন্যভাবেও সহায়তা নেওয়া হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন। এতে দেখা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টাকার অঙ্কে মোট বরাদ্দ ২২ হাজার ২২ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর মূল বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। এই মন্ত্রণালয়ের এডিপিতেও শতাংশের হিসাবে যা ছিল তা-ই আছে। এডিপিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল বাজেটে ৭ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে করা হয় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে এডিপির জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে টাকার অঙ্কে এই বরাদ্দ কিছু বেড়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে সামগ্রিক বরাদ্দ শতাংশে কমেছে। এই বিভাগে সামগ্রিক ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ সংশোধিত বাজেটে তা ছিল ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর মূল বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এই বিভাগের অধীনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে কিছু বাড়লেও মূল বাজেটের চেয়ে কম।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এডিপির জন্য বিদায়ী অর্থবছরে মূল বাজেটে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে তা কমে হয় ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তা আরও কমে হয়েছে ৪ শতাংশ।
অথচ মাধ্যমিক শিক্ষাই এখন সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে। এই স্তরে শিক্ষকের যেমন সংকট, তেমনি ঝরে পড়ার হার বেশি। এই স্তরের মানও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ। অবশ্য বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ হাতে নেওয়া হচ্ছে। এতে সম্ভাব্য বিনিয়োগ হবে প্রায় ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা অনুযায়ী, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ৪ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা।
নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ সরকারি অনুদানভুক্ত করা) করা বিষয়েও কোনো কথা নেই অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
শিক্ষা খাতের বাজেট সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে এখন চ্যালেঞ্জ হলো মান বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষায় এই চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। এ জন্য জোরালো পদক্ষেপ না থাকলে যা ছিল তা-ই হতে থাকবে। মানের জন্য বড় উদ্যোগ দরকার ছিল। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সেই উদ্যোগ অনুপস্থিত।