৮ জুলাই ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবির) ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দুই যুগ আগে এইদিনে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পটুয়াখালীতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে পবিপ্রবি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সরকার (১৯৯৬-২০০১) দক্ষিণবঙ্গে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছিলো ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় দেশের ১২টি বৃহত্তর জেলায় ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনার গ্রহণ করা হয় এবং প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের জন্য ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয় যার মধ্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পটি ছিল একটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুন কাদের মো. ইউসুফকে (প্রয়াত) প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পটুয়াখালীর দুমকিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস আছে। সৃষ্টির শুরুতে এটি একটি বেসরকারি কৃষি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ নামে ১৯৭৯-৮০ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের অধিভুক্ত হয়ে যাত্রা শুরু করে। পটুয়াখালীর দুমকিতে কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছিলেন তৎকালীন কেবিনেট সচিব (পরবর্তী ধর্মমন্ত্রী) দুমকির কৃতী সন্তান এম কেরামত আলী। এর পরবর্তী প্রায় দুই দশক পর, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুলাই তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই কৃষি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।
বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষার ব্রত নিয়ে যাত্রা শুরু করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর এখানে ১৯৯৯-২০০০ সেশনে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। অতপর ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই জাতীয় সংসদে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ বিলুপ্ত করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলে সাময়িক সময়ের জন্য স্থবির হয়ে পরে দক্ষিণবঙ্গের ১ম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পবিপ্রবির শিক্ষা কার্যক্রম। এক ধরনের অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত হয় ১৯৯৯-২০০০ সেশনে ভর্তি হওয়া ১ম ব্যাচের ১২৫ জন শিক্ষার্থীদেও শিক্ষাজীবন। অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে অবশেষে আনন্দের সংবাদ আসলো। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তব রূপ লাভ করলো। পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন স্থানীয় অনেক গণ্যমান্য মানুষের প্রত্যক্ষ ভুমিকা ছিলো। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দুমকি উপজেলার মানুষের অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল। তবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, বিশেষ করে সংসদে আইন পাস ও প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম সম্মানের সহিত খচিত থাকবে।
পবিপ্রবি এখন দক্ষিনবঙ্গের সব্বোর্চ বিদ্যাপীঠ। ১৯৭৯-৮০ খ্রিষ্টাব্দে কৃষি কলেজ ও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে কেবলমাত্র কৃষি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৮টি অনুষদের অধীনে ৯টি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি দিচ্ছে। বর্তমানে পবিপ্রবির কলেবর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার ছাত্রছাত্রী, ২৫০ জন শিক্ষক, ২০০ জন কর্মকর্তা ও ৫০০ জনের বেশি কর্মচারী রয়েছেন। পবিপ্রবি দেশ ও জাতির সময়োপযোগী চাহিদা পূরণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানসম্মত গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে ভুমিকা রাখছে। তা ছাড়া মাস্টার্স ও পিএইচডি গবেষণায় পবিপ্রবির এগিয়ে যাচ্ছে। পবিপ্রবির অনেক শিক্ষক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে চলেছেন। দেশের সেরা গবেষকদের তালিকায় পবিপ্রবির শিক্ষকেরা স্থান পাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতা আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। পবিপ্রবিকে মানসম্মত ও প্রযুক্তি নির্ভর উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা হিসেবে বিনির্মাণে আমাদের সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
গত দুই দশকে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার হলেও এখনো গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়নি। তাই পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার গুনগত মান বৃদ্ধিও জন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা ও গবেষনায় আধুনিক করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান করতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণায় অনেক দূর এগিয়ে নিতে যেতে হবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি