শিক্ষা জাতীয়করণের অসমাপ্ত আখ্যান

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ |

ক্ষীণ আশ্বাসবাণীর মধ্য দিয়ে শিক্ষা জাতীয়করণের ফিকে হয়ে আসা প্রত্যাশা কিছুটা হলেও টিকে রইলো। সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাদের আমলাতান্ত্রিক বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের অবস্থান ও অনশনের অবসান ঘটলো। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দীর্ঘ অবস্থান ও অনশন শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের পথচলাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অসামান্য ও অনন্য উচ্চতায়। আশা করি শীঘ্রই শিক্ষা জাতীয়করণ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
যদি জানতে চাওয়া হয়

(ক) কোনো পেশায় কি সবাই একই হারে বাড়িভাড়া পায় ?
(খ) কোনো পেশায় কি কেউ চারটি উৎসবে একটি উৎসবভাতা পায় ?
(গ) কোনো পেশায় কি পদোন্নতি ও বদলী নেই ?
(ঘ) কোনো পেশায় কি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল ও বৈশাখীভাতা দেওয়া হয় না ?
(ঙ) কোনো পেশায় কি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী বেতনের পরিবর্তে ‘অনুদান’ সুবিধা দেওয়া হয় ?

তবে উত্তর হলো, এমপিওভুক্ত নিরিহ বেসরকারি শিক্ষকগণই এমন গর্বিত পেশার মাধ্যমেই জ্ঞানের প্রদ্বীপ জ্বেলে যাচ্ছেন।

অনেকে মনে করেন, নির্বাচনের বছর সামনে রখে সরকারকে বিব্রত করা বা চাপে ফেলার জন্য শিক্ষা জাতীয়করণের চলমান তৎপরতা। কথাগুলো নিতান্তই খণ্ডিত ভাবনা। শিক্ষা জাতীয়করণের তৎপরতা এ পর্যায়ে পৌঁছেছে মূলত কয়েকটি কারণে:

(১) পেশাগত চরম বঞ্চনা। একজন সাধারণ শিক্ষকের সামর্থ্য এখন এমন যে, কেউ আর তাদেরকে দৈনন্দিন ধার-কর্জও দিতে চায় না।

(২) ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় বেতনস্কেলে এমপিওভুক্তদেরকে অন্তর্ভুক্তিতে বিলম্ব ও অনিশ্চয়তার পর তা দেওয়া।

(৩)২০১৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় বেতনস্কেলে বর্ণিত বৈশাখীভাতা ও ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি থেকে এমপিওভুক্তদের বঞ্চিত করা।

(৪)খণ্ডিত জাতীয়করণের তৎপরতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বাদ যাওয়া।

এমন আরো অনেক কারণে এমপিওভুক্তদের মধ্যে হতাশা ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেতেই থাকে। ফলে উচ্চারিত হতে থাকে জাতীয়করণের আওয়াজ। শিক্ষক সমাজের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে মূলত সামাজিক যোগাযোগ ও প্রচার মাধ্যমের সুবাদে। ক্রমে এ ঐক্য গড়ালো অনশন ও কর্মবিরতিতে।

আমরা জানি, যুগে যুগে কোনো দিনই মানুষের অধিকারের আওয়াজ হারিয়ে যায়নি। শিক্ষা জাতীয়করণের আওয়াজও ক্ষীণ হলেও শেষ হয়ে যাবে না। বরং জাতীয় প্রয়োজনে বারবার তা ফিরে ফিরে আসবে। শিক্ষকদের বঞ্চনার দীর্ঘশ্বাস ভারি হলে যে আশ্বাস শোনা গেল তা দ্রুততম সময়ে সোনালি আভায় উজ্জ্বল হোক। এটাই সবার প্রত্যাশা।

মানুষ গড়ার কারিগরদের আহাজারিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরব থাকেন নি। মানুষের কষ্টের কান্না সবচেয়ে বেশি টের পান বলেই তিনি আন্তরিকভাবে মহান জাতীয় সংসদে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাঁর কথা হলো: এমপিওভুক্তি ও শিক্ষা জাতীয়করণে, নীতিমালার আলোকে আগামি বাজেটে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানের নেতা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের কণ্ঠে মহান জাতীয় সংসদে শিক্ষা জাতীয়করণের আওয়াজ উঠেছে। এতে আমরা প্রত্যাশার পদধ্বনী শুনতে পাচ্ছি। পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও তাদের পরিবার মাদার অব হিউমিনিটি খেতাবধন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের অধিকারের আওয়াজ যেন অনন্ত অপেক্ষা ও আক্ষেপে হারিয়ে না যায়।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া গাজীপুর- ১৭৩০

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023369789123535