শিক্ষা বিষয়ক একটি পূর্ণকালীন টেলিভিশনের বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রস্তাবকে যৌক্তিক মনে করে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।
তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শিক্ষা বিষয়ক কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা জানান।
দীপু মনি বলেন, জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে তা নিয়ে আমরা কথা বলেছি, উনারা শিক্ষা বিষয়ক একটা পূর্ণকালীন টেলিভিশনের কথা বলেছেন, সেটা আমরাও মনে করি যৌক্তিক দাবি। প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকারের বদন্যতায় আমরা সংসদ টেলিভিশন ব্যবহার করি। যদি আরেকটি পূর্ণাঙ্গ টেলিভিশন পাওয়া যায় তাহলে খুব ভালো হয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি সেটা জানিয়েছি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শতভাগ মূল বেতন সরকার থেকে পায়, সেজন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো আচরণ বিধিমালা করার কথা বলা হয়েছে যাতে তারা রাজনীতি করতে না পারে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সেভাবে আসেনি, খালি একটা নীতিমালা চেয়েছে। ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য একটা আচরণ বিধিমালার প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা মনে করি এটা একটা ভালো প্রস্তাব। আমরা এটা নিয়ে কাজ করবো।’
শিক্ষা কর্মকর্তাদের পদবি পরিবর্তনের প্রস্তাবের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা- এটাকে একেবারে সুস্পস্টভাবে ভাগ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা; এরকমভাবে করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই যুক্তিযুক্ত, তাহলে বিভ্রান্তিটা থাকে না।
ডিসিরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাকে আলাদা করার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছেন উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনারাই (সাংবাদিক) কিন্তু বার বার সমন্বয়ের কথা বলছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলছেন। আমার মনে হয় অনেক বেশি ভাগ করলে সেই সমন্বয়টা আরও বরং কমতে পারে। কাজেই এ বিষয়টা নিয়ে আমাদের আরও অনেক ভেবে-চিন্তে দেখার বিষয় রয়েছে।
হাওর অঞ্চলে ছুটির সময় ভিন্ন করার প্রস্তাবে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটি নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি, একটা ফ্লেক্সিবল ক্যালেন্ডার। কারণ আমাদের দেশে কয়েকটি অঞ্চলে একটা ভিন্ন সময়ে বন্যা হয়, ঋতুর সঙ্গেও কিছু কিছু তফাৎ আছে। সেগুলোকে মাথায় রেখে একটা ফ্লেক্সিবল ক্যালেন্ডার করা, এটা নিয়ে আমরা আগে থেকেই কাজ করছি।
নবম-দশমে কারিগরির কোর্স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমেও তা আছে। আমরা ৬৪০টি বিদ্যালয়ে একেবারে দুটি ট্রেড বাধ্যতামূলকভাবে নিয়ে এসেছি। কারিগরিতে বয়সের বাধা ইতোমধ্যে তুলে দিয়েছি।
আট বিভাগে আট কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তারপরও টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিও হতে পারে। কিন্তু তার জন্য আট বিভাগে আট বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে সেটা হয়তো ওতটা দরকার নাও পড়তে পারে। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি ও প্রয়োজন বিবেচনা করে ইউজিসির মতামতের ভিত্তিতে সেটা প্রয়োজন হলে নিশ্চয়ই উদ্যোগ নেব।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ডিসিদের নির্দেশনা দেয়ার কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেহেতু তারা জেলা পর্যায়ে প্রশাসন পরিচালনা করেন। আমরা দুটি কমিটি করে দিয়েছি। এর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বিচার-বিশ্লেষণ করে যেখানেই সমস্যা, আপত্তি, ভুল যা কিছু থাকবে সেগুলো পরিমার্জনের ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো। আর একটি কমিটির কথা বলেছি, যেখানে আমরা দেখবো আমাদের ভেতরে কোথাও ইচ্ছেকৃতভাবে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা বা অন্য কোনোভাবে বিশেষ কাউকে আঘাত করা বা ইচ্ছে করে কাউকে হেয় করে কেউ কোনো কিছু করেছে কিনা সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন সবার ভূমিকা আছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা কিন্তু বহু কাজে তাদের সঙ্গে ইন্টাঅ্যাক্ট করবে। ভুল সংশোধনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।
প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিষয়ে প্রকল্প চলছে বলে ডিসিদের জানান শিক্ষামন্ত্রী। এছাড়া কক্সবাজারে একটা মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় করা যায় কিনা, সে প্রস্তাব তারা দিয়েছেন।