শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জমি রক্ষায় অভিভাবকদের সাথে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

কলাপাড়া(পটুয়াখালী) |

‘হুনছি আমাগো স্কুল,বাড়ি, জমি কিচ্ছু থাকবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্র বানানোর লাইগ্যা আমাগো গ্রামের হগল জমি লইয়া যাইবে। বাড়ি,স্কুল লইয়া গ্যালে আমরা থাকমু কই, কোনহানে পড়মু। তাই আইজ স্কুলে যাই নাই। আন্দোলনে আইছি। আমরা জমি দিমু না। স্কুল ভাঙ্গতে দিমু না।’ ফসলী জমি রক্ষার আন্দোলনে এসে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে এভাবে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তানজিল।

বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে তিন ফসলী জমি রক্ষার আন্দোলনে হাজার হাজার অভিভাবকদের সাথে অংশ নেয় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা চলাকালে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চেীধুরীসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রাস্তায় শুয়ে তাদের পথ আটকে জমি অধিগ্রহণ বন্ধের দাবি জানান।

কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের উত্তর দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ ছাত্রের আর ১৭ দিন পর বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু বই-খাতা ফেলে বড় বোন কলেজ ছাত্রী হাবিবার সাথে এসেছেন স্কুল ও বসত ঘর রক্ষার আন্দোলনে। তার মতো এ আন্দোলনে উপস্থিত ১৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ধানখালী ইউনিয়নে পাঁচজুনিয়া, ছৈলাবুনিয়া, নিশানবাড়িয়া ও চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমি সেনা কল্যাণ সংস্থা ও আশুগঞ্জ কোম্পানী অধিগ্রহণের জন্য গ্রামবাসীদের তিন ও ছয় ধারা নোটিশ দিয়েছে। এ চারগ্রামে দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য পাঁচজুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচজুনিয়া ধানখালী হাই এ্যাটাচ প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য ধানখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যারয়, ধানখালী মহিলা দাখিল মাদরাসা, ধানখালী আশরাফ একাডেমি, পিএন্ডডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ধানখালীটেকনিক্যাল কলেজ, ধানখালী ডিগ্রি কলেজ ও ধানখালী ভোকেশনাল স্কুল রয়েছে।

এছাড়া প্রায় এক হাজার একর তিন ফসলী জমিও ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নে। এ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে গত ১৮ অক্টোবর পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন গ্রামবাসী। 

গ্রামবাসীদের স্মারকলিপির সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ধানখালী আসলে এ জমি অধিগ্রহণ বাতিলের দাবিতে এ বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীসহ চার গ্রামের হাজারো মানুষ। দক্ষিণ দেবপুর গ্রামের সোবাহান মোল্লা বলেন তার  ছেলে রাহুল ইসলাম দশম শ্রেণিতে, লিমন হোসেন  দ্বিতীয় শ্রেণিতে ও মেয়ে লামিয়া পড়শি স্বর্ণা নবম শ্রেণিতে পড়ে। শেষ বয়সে এসে যদি তার বসত ঘর, চাষের জমি বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করে বসত ভিটা ছাড়া করে তাহলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় দাড়াবেন। ওদের তো শিক্ষাজীবনই শেষ হয়ে যাবে। একই গ্রামের বশির মোল্লা জানান, তার দুই সন্তান তাওসীফ তৃতীয় শ্রেণিতে ও মেয়ে নাজনীন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তার শেষ সম্বল চাষের জমিটুকুই। কৃষি ছাড়া জীবনে কোন কাজও শিখিনি। এখন যদি এই জমি অধিগ্রহণ করা হয় তাহলে পথে নামা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। কৃষক অ বকর সিদ্দিক বলেন, তার ছেলে তরিকুল ইসলাম ও মেয়ে সাবেকুন্নাহার দুজনই নবম শ্রেণিতে পড়ে। সামনে ওদের পরীক্ষা। কিন্তু জয়গা-জমি, ঘর ও স্কুল সব অধিগ্রহণ হয়ে যাবে এ চিন্তায় এখন তাদের পড়ালেখায় মন নেই। শুধু চিন্তা তারা ভিটেমাটি ছাড়া হলে কোথায় যাবে, কোন স্কুলে পড়বে । 

বরিশাল হাতেম আলী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ফাতেমা তুজ জোহরা ১০ দিনের ছুটিতে পাঁচজুনিয়া গ্রামের বাড়ি এসেছেন। কিন্তু বাসায় এসে তার ঘুম হারাম। এসেই শুনতে পান তাদের বসত ঘর, চাষের জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি ছাড়তে হবে। তাই এ সম্পত্তি রক্ষার দাবিতে তিনিও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে আন্দোলনে এসেছে। ফাতেমা জানায়, আব্বায় কৃষক। মাঠে ধান চাষ হয়,তাই ছোট বোন বুশরাত জাহান(চতুর্থ শ্রেণি) ও আমি পড়াশোনা করছি। এখন যদি আমাদের জমি সব নিয়ে যায় তাহলে আমাদের লেখাপড়ার কি হবে? সরকারের কাছে দাবি দুটি বিদ্যুতকেন্দ্র হয়েছে এবার অন্য কোথাও বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করে আমাদের বাঁচান।

আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, এখানে আর কত বিদ্যুতকেন্দ্র হবে। বিভিন্ন চরে হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে অথচ তিন ফসলী এ জমি নেয়ার জন্য তাদের চাপ দেয়া হচ্ছে। তারা জীবন দিবেন তবুও এক ইঞ্চি জমি আর কোন বিদ্যুত কেন্দ্রকে দিবেন না। ফরিদ উদ্দিন তালুকদার বলেন, কৃষি নির্ভর ৮৫ ভাগ মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল এ জমি অধিগ্রহণ করা হলে ৯৫ ভাগ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026559829711914