শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির মান নিয়ে প্রশ্ন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের বেসরকারি কলেজে গভর্নিং বডির অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় শিক্ষাকার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজ, দখলবাজ, টেন্ডারবাজ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা সভাপতি পদে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির মান নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কলেজের শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে গভর্নিং বডির কাঠামো ঢেলে সাজানোর পক্ষে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর একটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি মামলা হয়েছে। শুধু সভাপতি নিজে নন, তার ছেলেও স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেন। সম্প্রতি তার ছেলেকে এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঐ সভাপতিকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন।

মিরপুরের রূপনগরের একটি কলেজের সভাপতি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে সভাপতির পদ ছাড়তে হয় তাকে। পরে এমপির মনোনীত সভাপতি হন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই কলেজ সভাপতির বিরুদ্ধে স্থানীয় বিভিন্ন মার্কেট দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আয় তার প্রধান কাজ। তার কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান এখন নিম্নমুখী। দেশের বেশির ভাগ কলেজের গভর্নিং বডির চিত্রই এমন। তবে ব্যতিক্রমও আছে। এমন সংসদ সদস্যও রয়েছেন যিনি তার নির্বাচনী এলাকার কলেজগুলোর সভাপতি পদে সৎ ও যোগ্য লোক মনোনয়ন করেছেন। সেখানকার কলেজগুলোও ভালো চলছে।

এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দমতো চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হতে পারতেন। কিন্তু আদালতের রায়ে সংসদ সদস্যদের সেই সুযোগ বাতিল হয়ে যায়। সংসদ সদস্যরা বাধ্য হয়ে চলে গেলেও এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় রয়েছেন থানা-ওয়ার্ড শাখার বিভিন্ন স্তরের নেতারা। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য যাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে সেসব শিক্ষানুরাগীরা সুযোগই পাচ্ছেন না। এমনকি আদালতের নির্দেশনায় সরাসরি নির্বাচনের কথা বলা হলেও আগের মতোই মনোনয়নে আটকে আছে সভাপতির পদ। নির্বাচন ছাড়াই নির্বাচিত হচ্ছেন সভাপতিরা। এক্ষেত্রে থানা ও ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রাধান্য পাচ্ছেন।

আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষানুরাগী বলছেন, সংসদ সদস্যরা তাদের মনোনীত সৎ ও শিক্ষানুরাগীদের সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দিলে কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মনোনয়ন দেয়া হয় অসৎ, অদক্ষ, সন্ত্রাসী বা অশিক্ষত ব্যক্তিকে। এছাড়া গভর্নিং বডিতে বিদ্যোৎসাহী সদস্যও করা হয় সংসদ সদস্যের মনোনীত ব্যক্তিকে। সভাপতির মতো এ পদেও অদক্ষ ও অসত্ ব্যক্তিরা যুক্ত হচ্ছেন। বিদ্যোৎসাহী সদস্য অভিভাবকদের মধ্য থেকে মনোনয়নের দাবি করেছেন শিক্ষকরাও। একাধিক অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক জানান, সংসদ সদস্যরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তাদের কাছে অনুরোধ-উপরোধ নিয়ে গেলে তারা সেই কথার কিছুটা হলেও মূল্য দিতেন, যে কোনো কাজ বাস্তবায়নে সর্বোতভাবে সাহায্য করতেন। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর এখন যারা সভাপতি হচ্ছেন তাদের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই। আর তারা শিক্ষকদের কথা শুনতেও চান না। নিজেরা যা ভালো বোঝেন সেটিই করছেন।

গভর্নিং বডির ১৬টি দায়িত্ব পালনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমানে বেশির ভাগ কাজই সরকার নিজ দায়িত্বে করে দেয়। ফলে যে কিছু কাজ অবশিষ্ট থাকে তা নিয়েই অনিয়ম করেন। কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও কর্মচারী নিয়োগে বিভিন্ন অঙ্কের ঘুষ নেন সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টরা। ভুয়া বিল ভাউচার বানিয়ে কলেজ ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেন। টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেন অস্থায়ী বা খণ্ডকালীন শিক্ষক ও কর্মচারী। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাত্ করেন। লুটপাট করেন কলেজে উন্নয়নের নামে বিভিন্ন খাতের অর্থ।

কলেজের অধ্যক্ষ মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং শিক্ষকরাও প্রায় সমমানের ডিগ্রিধারী। অথচ কলেজ পরিচালনার জন্য দায়িত্বে থাকা গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো মাপকাঠি নেই। গভর্নিং বডির সভাপতির যোগ্যতা স্নাতক করার জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলো উদ্যোগ নিলেও সংশ্লিষ্টদের আপত্তির মুখে উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

ড. জসীম উদ্দিন নামে এক শিক্ষক বলেন, বর্তমানে যে প্রবিধানমালা রয়েছে তার কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করলে কিছুই হলেও যোগ্য লোক আসতে পারবে এই কমিটিতে। নির্বাচন অবশ্যই দলীয় প্রভাব মুক্ত করতে হবে।

শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, গভর্নিং বডির মান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংসদীয় কমিটিতেও। আমরাও বিষয়টি দেখছি। কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নে গভর্নিং বডি যাতে ভূমিকা রাখে সে আলোকেই প্রবিধানমালা তৈরির উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ - dainik shiksha ১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062618255615234