বিনাভোটে এমপিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার বিধান বাতিল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার মৌখিক আদেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এমন আদেশ পেয়ে ধন্দে পড়েছে ১০ টি শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানস’ কমিটি। মন্ত্রণালয় থেকেই আপিল করার সিগন্যালের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার চেয়ারম্যানরা আলোচনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চেয়ারম্যান বলেছেন, সরকার হলো মন্ত্রণালয়, শিক্ষাসচিব; বোর্ড সরকার নয়। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে করবে মন্ত্রণালয়, বোর্ড কেন?
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম ছায়েফউল্যা সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে উপস্থিত অন্য বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এ ব্যাপারে নির্দেশনা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়ার জন্য মতামত দিয়েছেন। সে অনুযায়ী একটি চিঠি দেয়া হবে। নির্দেশনা পাওয়া গেলে আপিল করা হবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই মামলার বিবাদী শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বোর্ড। সে অনুযায়ী নির্দেশনা পেলে আমরা আপিল করব।’
একবার আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন আবার ব্যাকডেটে আপিলের সিদ্ধান্ত। এ দুই নিয়ে ধন্দে চেয়ারম্যানরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, নিয়ম হচ্ছে রায়ের ৬০ দিনের মধ্যে কোনো মামলার ব্যাপারে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আপিল করতে হবে। ১ জুন এ মামলার রায় হয়। সে হিসাবে বিষয়টি তামাদি হয়ে গেছে। আপিলের সুযোগ নেই। তবে আদালত তা গ্রহণ করেন কিনা তা এখনই বলা যাবে না।
বেসরকারি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯ এর দুটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। আবেদনে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশ-১৯৬১ এর ৩৯(২) ধারায় আইন তৈরি করার ক্ষমতা বোর্ডকে দেয়া হয়েছে। তবে কী ধরনের আইন তৈরি করতে হবে তা ওই ধারায় ৬ষ্ঠ দফায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এ দফায় বিশেষ কমিটি বা সংসদ সদস্যরা গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হবেন এরূপ কোনো ক্ষমতা বোর্ডকে দেয়া হয়নি। ফলে প্রবিধানমালার ৫ ও ৫০ ধারা উক্ত অধ্যাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া এসব ধারা সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ৭, ২৬, ২৭, ২৮, ৩১, ৫৯, ৬০ ও ৬৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ জুন হাইকোর্ট রায় দেন। রায় অনুযায়ী এমপিরা দেশের বেসরকারি স্কুল ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। রায়ে এমপিদের নিয়োগ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ৫(২) ধারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হাইকোর্ট এ বিধানকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেন। এ বিধিমালার আলোকে সংসদ সদস্যরা যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণে ইচ্ছুক তা লিখিতভাবে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অভিহিত করতেন। এ ছাড়া হাইকোর্ট বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধানমালার ৫০ ধারাও অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ওই ধারার ক্ষমতাবলে শিক্ষা বোর্ড এবং সরকারের অনুমতি নিয়ে অনির্বাচিত লোকদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হতো। এ কারণে হাইকোর্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য গঠিত বিশেষ কমিটিও অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন।
আইনজীবীরা জানান, রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্কুলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি দু’দফায় আপিলের উদ্যোগ নেন। এরমধ্যে প্রথমটি ছিল মিস আপিল ও পরেরটি লিভ টু আপিল। মিস আপিল চেম্বার জজ আদালত এবং ফুল কোর্টে শুনানিতে টেকেনি। রায় প্রকাশের পর উল্লিখিত পক্ষগুলো ফের আপিল করেন। ফুল কোর্টে এটির এক দফা শুনানি হয়েছে। ৩০ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য আছে।