শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে কারিগরি কমিটির যত পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কমতে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বাড়তি সতর্কতা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। কমিটি বলছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ৮০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর টিকা নিশ্চিত করতে হবে। টিকা নেওয়া ১৪দিন পর শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানে আসার অনুমতি দিতে হবে। শ্রেণিকক্ষে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে যেসব জেলায় করোনা শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, সেখানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সোমবার রাতে কমিটির এক সভায় এসব সুপারিশ করা হয়। সভায় কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

করোনা সংক্রমণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত রোববার এই ঘোষণার সময় বলা হয়, চলতি এবং আগামী বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর পরীক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভায় বলা হয়, সব শিক্ষার্থীর শিক্ষা এবং শিক্ষক, কর্মচারী ও সমাজের মঙ্গল এবং স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সব ধরনের ঝুঁকি কমাতে যথাযথ ব্যবস্থাপনা দরকার। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং তাদের যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এলাকায় করোনার পরবর্তী সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।

সুপারিশে বলা হয়, সব স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ছাড়া এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী হতে হবে।

কেন্দ্রীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত, মানসম্পন্ন ও সঠিক মাপের মাস্কের ব্যবস্থা ও বিতরণ করতে হবে। একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যান্য পদক্ষেপ, যেমন হাত পরিষ্কার রাখা (হাত ধোয়া বা হাত জীবাণুমুক্তকরণ স্টেশন স্থাপন) ও সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।

কমিটি বলেছে, স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কমপক্ষে ৮০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারীর টিকা নেওয়া থাকতে হবে। তারা দ্বিতীয় ডোজের ১৪ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের ১৪ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

শ্রেণিকক্ষে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নির্দিষ্ট ক্লাস কোনটি সপ্তাহের কোন দিন হবে, তা বিভক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন প্রথম দিকে পরীক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিদিন খোলা রাখা ছাড়া বাকি সব ক্লাস সপ্তাহের এক বা দুই দিন খোলা রাখা যেতে পারে। এতে একটি নির্দিষ্ট দিনে যে ক্লাসটি খোলা থাকবে, তার শিক্ষার্থীরা অন্য খালি শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করে তাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে বসতে পারবে। প্রাতঃসমাবেশ (অ্যাসেম্বলি) বন্ধ রাখতে হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রস্তুত করা দরকার।

প্রথম দিকে কম সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি, যাতে খাবার গ্রহণের জন্য মাস্ক খোলার প্রয়োজন না হয়।

কমিটি আবাসিক সুবিধাসংবলিত স্কুল, মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে আছে সমাবেশ হতে পারে এমন স্থানগুলো (ক্যাফেটেরিয়া, ডাইনিং, টিভি-স্পোর্টস রুম, ইত্যাদি) বন্ধ রাখা, রান্নাঘর থেকে রুমগুলোয় সরাসরি খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা ও একাধিক শিক্ষার্থী একই বিছানা ব্যবহার না করা। মাদরাসায় একসঙ্গে নামাজ, সমাবেশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অন্য কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণ পর্যবেক্ষণ এবং দৈনিক রিপোর্ট করার ব্যবস্থার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, যেমন শনাক্তের হার ২০ শতাংশের বেশি, সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও ভ্যাকসিনসহ জনস্বাস্থ্য প্রতিরোধে কার্যক্রমের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ গতিবিধি/করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034329891204834