শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা খোলা নিয়ে অস্পষ্টতা

মাছুম বিল্লাহ |

গতকাল শুক্রবার নবনিযুক্ত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেনন, আমাদের রাস্তাঘাটে বর্তমানে ট্রাফিক পুলিশ নেই। স্বস্ফূর্তভাবে শিক্ষার্থীরাই রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করছেন। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আমরা স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার ঘোষণা দেবো। তিনি হয়তো বুঝাতে চেয়েছেন যে, শিক্ষার্থীরা তো ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য প্রশিক্ষিত নয়, এ অবস্থায় বাচ্চাদের স্কুল খোলা অনেকটাই রিস্কি। তাছাড়া স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনও রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ণÍ্রণসহ পরিস্কার পরিচছন্নতার কাজ করছেন। এ অবস্থায়  অনেকেই  আবার শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহন করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত নন।

আমরা আশা করছি বিদ্যালয় শীঘ্রই খোলা হবে। তবে, পাঁচ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পরই রাতের বেলা আইএসপি আর  ( ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস) জানায় যে, আগামীকাল অর্থাৎ ৬ আগস্ট  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা হবে। সেই অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল কিন্তু শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ৭ ও ৮ আগস্ট শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কিছুটা বেড়েছে। আশা করা যাচেছ যে, ১১ আগস্ট অর্থাৎ রোববার থেকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। আমরা জানি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৭জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।  পরে ৪ আগস্ট প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর  কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে হয় এবং তার পর পরই বলা হয় যে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। ৫ আগস্ট রাতের বেলা আইএসপিআর-এর ঘোষণা আসার পর কিন্তু দেশের প্রায় সর্বত্র প্রাথমিক ও মাধ্যমিক  বিদ্যালয়সমহ খুলে দেয়া হয় যদিও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের অনেক বাবা-মা ইচেছ করেই বিদ্যালয়ে পাঠাচেছন না। আর ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে সীমিত আকারে পাঠদান চলছে।

শিশু শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা মোটামুটি বিদ্যালয় কেন্দ্রিক। বিদ্যালয় খোলা না থাকলে তারা কিন্তু বড়দের মতো পড়াশুনার তাগিদ অনুভব করেন না। ৬ আগস্ট থেকে যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলা হয়েছে কিন্তু মাধ্যমিক পর্যায়েই শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে হাজির হননি, হয়তো ১১ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করবে। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে এখনও সেভাবে কিছু বলা হয়নি তবে বার বার বন্ধ, পরীক্ষা পেছানো, রাজনৈতিক সহিংসতা সবমিলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক বৈকল্যও সৃষ্টি হয়েছে, আরও সৃষ্টি হয়েছে মানসিক ট্রমা। বিদ্যালয় খোলার পর তাদের মানসিক ট্রমার বিষয়টি খেয়াল রেখে শ্রেণিকার্যক্রম ও একাডেমিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করা প্রয়োজন। তাছাড়া অনাকাঙ্খিত বন্ধের কারণে সব ধরনের শিক্ষার্থীদের বিশাল এক একাডেমিক  ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে যা থেকে  কাটিয়ে উঠতে তাদেরকে বিদ্যালয়ে একটু বেশি সময় দিতে হবে। শিশু শিক্ষার্থীরা আবার একটানা বেশিক্ষণ এককাজে থাকতে পারেননা। তাদের সাইকোলজি আলাদা, তাদের অ্যাটেনশন স্প্যান কম। তাই বিদ্যালয়ে বিরতি দিয়ে দিয়ে হাসি আনন্দের মাঝে দীর্ঘক্ষন কাজ করাতে হবে। আবার খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে তা না হলে তারা কোনওভাবেই শ্রেণিকার্যক্রমে মনোযোগ দিতে পারবেনা। এটি সরকার, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকগন যৌথভাবে করতে পারেন তা না হলে শিশুদের যে অপরিমিত ক্ষতি হয়ে গেল সেটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবেনা বছরের যে বাকী ক’টা মাস আছে তার মধ্যে। কেউ কেউ অনলাইন লার্ণিংয়ের কথা বলেছেন কিন্তু এটি খুব একটা কার্যকরী হয়না। তাছাড়া এটি ডিজিটাল ডিভাইড সৃষ্টি করে। কারণ আমাদের গ্রাম, শহর, বড় শহর, ছোট শহর, পাহাড়িয় এলাকা, হাওড় বাওড় সর্বত্রই আলাদা পরিস্থিতি। সেক্ষেত্রে অনলাইন লাণিং আরও গ্যাপ বাড়াবে ভৌগলিকভাবে অবস্থিত বিদ্যালয়গলোর বিভিন্নতার জন্য।  

মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ষাণ¥াসিক মূল্যায়নের কাজটিও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে মাঝপথে থেমে যায়। তবে, ষান্মাসিক মূল্যায়নের কোন নির্দেশনা না এলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিটি শ্রেণির প্রতিটি বিষয়ের ওপর ক্লাস চালিয়ে যাওয়া উচিত এবং ২০২৪ সালের পুরো সিলেবাস অনুযায়ী বইয়ের বিভিন্ন চ্যাপ্টার বা শিখন অভিজ্ঞতার ওপর শ্রেণি কার্যক্রম চালিয় যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। শিক্ষার্থীরা এমনিতেই বিশাল এক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন বিদ্যালয় খুলে দেয়ার পর ষান্মাসিক মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত বসে থাকা কোনোভাবেই ঠিক হবেনা। 

গতকাল উপদেষ্টার মন্তব্যের পর  প্রতিষ্ঠান প্রধানরা একটু দ্বিধার মধ্যে পড়েছেন। আগামীকাল অর্থাৎ ১১ আগস্ট তারা কি করবেন? এর অবস্থায় তারা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সঠিক নির্দেশনা চাচেছন। দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা চেষ্টা করা হচ্ছে যাবে আজ রাতেই একটা আদেশ জারি করা হয়।  


লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032260417938232