শিক্ষা প্রশাসনের সেই ২৩ পদ এখনো শূন্য

নিজামুল হক |

শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকায় কর্মরত বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ২৩ জনকে রাজধানীর বাইরে বদলি করা হয়েছিল গত ২২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এসব পদে এখনো কাউকে পদায়ন করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড চলছে ধীরগতিতে। কোন কোন দপ্তরে কাজ প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম।

সাধারণত যখন কোন পদ থেকে কাউকে বদলি করা হয়, তখন একই সঙ্গে ওই পদে অন্য কাউকে পদায়ন করা হয়। কিন্তু এখনও এসব পদে কাউকে পদায়ন না করার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যোগ্য কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে। খোঁজ পেলেই নিয়োগ দেওয়া হবে এবং শিগগিরই। তবে অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, এসব ‘লোভনীয়’ পদে নিয়োগ পেতে অনেকেই মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

কর্মকর্তাদের একটি অংশ অভিযোগ করেছেন, যাদের ওই পদগুলো থেকে বদলি করা হয়েছে, তারা আবার সেখানে ফিরে আসার জন্য তদবির করছেন। তাদের মধ্যে কাউকে স্বপদে ফেরত আনতে সময় ক্ষেপণ করা হচ্ছে।

সুবিধা লাভের জন্য একই পদে দীর্ঘদিন ধরে আছেন শিক্ষা প্রশাসনে এমন কর্মকর্তার সংখ্যা শতাধিক। এসব কর্মকর্তা ‘লোভনীয়’ পদে থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করছেন মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে। বদলি ও কমিশন বাণিজ্য, শিক্ষকদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের সময় অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নিয়ে থাকেন এসব কর্মকর্তা। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আটজন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ছয়জন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নয়জন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের একজন এবং ঢাকার বাইরের কয়েকটি শিক্ষা বোর্ডের ছয়জন কর্মকর্তাকে বদলি করে আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। দ্রুততর সময়ে এসব কর্মকর্তা ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। ফলে এসব পদ খালি হয়ে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর মধ্যে রয়েয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ও বিদ্যালয় পরিদর্শক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোই করে থাকেন এই পদে থাকা কর্মকর্তারা। এই পদ শূন্য থাকায় কাজ প্রায় থেমে আছে।

মাউশির উপ-পরিচালক (প্রশাসন) পদ শিক্ষা অধিদপ্তরে সকল প্রশাসনিক কাজের দায়িত্ব পালন করেন। বেতন ভাতা বিল তৈরি, বদলি, শিক্ষকদের প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধার ফাইলগুলো এই দপ্তরের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। এই পদ শূন্য থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা ভোগান্তি শিকার হচ্ছেন।

ঢাকা বোর্ডের দুইজন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদ শূন্য থাকায় পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা। বই ছাপা ও বিতরণ সংশ্লিষ্ট কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এনসিটিবির গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায়।

ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান নেই তিন মাস : ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান। তিনি চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসাবে নিয়োগ পান। তখন থেকে এই পদ শূন্য। দেশের ১০টি শিক্ষাবোর্ড সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান। ফলে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকে। এছাড়া আগামী ২ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।

বর্তমানে বোর্ডের সচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করলেও বোর্ড গতিহীন। শাহেদুল খবির চৌধুরী বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের অর্থনীতি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। চেয়ারম্যানের পদটি সিনিয়র অধ্যাপক পদ মর্যাদার। পদাধিকার বলে তিনি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতিও। অধ্যাপক না হলেও শাহেদুল খবির চৌধুরীকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ায় পদটির ‘অমর্যাদা’ উল্লেখ করে অনেকে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত থাকতে অনীহা প্রকাশ করছেন। অতিদ্রুত চেয়ারম্যানের শূন্য পদ পূরণের দাবিও তুলেছেন অন্যান্য শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা।

২০০৯ সালে প্রথমে শাহেদুল খবির বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক হিসেবে প্রেষণে দায়িত্ব পান। পরে হন ভারপ্রাপ্ত সচিব। সেখান থেকে সচিব হন। অর্থাত্ টানা নয় বছর এই বোর্ডে প্রেষণে আছেন এই কর্মকর্তারা। তিনি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের জন্য তিনজনের নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি সেলিম উল্লাহ খন্দকার বলেন, সমিতির কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। আমাদের কাছে যথেষ্ট সংখ্যক সত্, দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক আছেন।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024058818817139