শিক্ষা বাণিজ্য ও বৈষম্যমূলক অনলাইন ক্লাস প্রসঙ্গে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনার সময়ে সারা দেশে সাধারণভাবে শিক্ষার সব স্তরে এবং বিশেষভাবে প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরুর ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ভাইস চ্যান্সেলরদের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস শুরুর ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন, যা খালি চোখে দেখলে শিক্ষাবান্ধব পলিসি বলেই আমাদের মনে হতে পারে। আমাদের কাছেও যে নির্দেশনাগুলো এসেছে তা এমন—যেকোনোভাবেই ‘ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন ক্লাস নিতে হবে। তাদের সাথে টাচে থাকতে হবে। এখন মোটামুটি যা ক্লাস নেয়া হবে, তা দিয়ে চূড়ান্ত মূল্যায়নভিত্তিক কোনো পরীক্ষা নেয়া যাবে না। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে দ্রুত ক্লাস শেষ করে যাতে পরীক্ষা নেয়া যায়, সেজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে ইউজিসির এ প্রস্তাবনা এবং আমাদের ওপর নির্দেশনার বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরার জন্যই এ লেখা। শনিবার (৬ জুন) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চালুর ব্যাপারে সরকারের যে নির্দেশনা, অনেকটা সরাসরি ও সমজাতীয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রকৃতি, আইনি কাঠামো, কাঠামোগত অবস্থান, শিক্ষার সুযোগ ও সুবিধা ভিন্ন। তাই স্বাভাবিকভাবেই একই ধরনের ও সমজাতীয় নির্দেশনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রকৃতি ও মান, তার সঙ্গে কোনোভাবে নতুন প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের মান এক হওয়ার সুযোগ নেই। তাহলে যে নির্দেশনা বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য, সেই একই ধরনের প্রস্তাবনা কিন্তু পিছিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ ধরুন বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি ইনস্টিটিউটের কাঠামোগত সুবিধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ সুবিধা ও পূর্ব অভিজ্ঞতার সঙ্গে কিন্তু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা এক নয়।

দু-একটি জায়গায় এমন শুনেছি যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) নাকি অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে সফল। এখন প্রশ্ন, যে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতার গল্প আমাদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে, দেখা গেল এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমনিতেই সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, শুনেছি এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীত বিষয় হলো কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা, যাদের শিক্ষার্থীই অত্যন্ত অল্প। মাত্র ৩০-৪০ জনের মতো। অথচ দেখুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের গড় শিক্ষার্থীর সংখ্যাই দুইশর ওপর। তাহলে এ দুটি বিষয়ের মধ্যে তুলনা করলেই আপনারা বুঝতে পারবেন কোনটির ক্ষেত্রে ক্লাস নেয়া তুলনামূলকভাবে সহজ এবং কিছুটা বাস্তব আর কোনটির ক্ষেত্রে তা একেবারেই অসম্ভব! তাহলে সরকারের অনলাইন ক্লাস সম্পর্কিত নির্দেশনা সমজাতীয় হলে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য অসমজাতীয় ও অনেকটাই বৈষম্যমূলক।

কিছুদিন ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যারা অনলাইনে ক্লাসের পক্ষে বিশেষজ্ঞ হিসেবে লিখছেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড খেয়াল করলে দেখবেন যে তারা বেশির ভাগই দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদ্যার শিক্ষক কিংবা গবেষক। তাদের আলোচনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা স্কুল-কলেজে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা কী, কীভাবে নেয়া যায়, কী কী প্রযুক্তি পাশ্চাত্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করে, তার বিশদ টেকনিক্যাল ব্যাখ্যা আছে। কোন কোন সফটওয়্যার দিয়ে বা কোন পদ্ধতিতে এসব ক্লাস নেয়া যায়, তা নিয়ে সুন্দর ও বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা করেছেন। এটি হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের অনলাইন বা ডিজিটাল ক্লাস সম্পর্কিত জাতীয় নীতিমালা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। আমার মনে হয়, তাদের এ লেখালেখি দেখেই হয়তো সরকার বিবেচনা করছে যে ইচ্ছা করলেই অনলাইন বা ডিজিটাল ক্লাস নেয়া যায়। যেমন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও একজন প্রযুক্তিবিশারদ এ বিষয়ে ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ইতিবাচক উদাহরণ তৈরি করেছেন। কিন্তু এক্সপার্টদের কেউই সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেননি বলেই আমার মনে হয়েছে। আবার কিছু বিশেষজ্ঞের মধ্যে যারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেছেন, তারা কিন্তু অনলাইনে ক্লাস কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্য তৈরি করতে পারে, তা নিয়ে আলোকপাত করেছেন। যাহোক, আমি অন্যদের লেখার বাইরে দু-একটি বিষয় তুলে ধরব।

প্রথমত, ইউজিসি প্রধানত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে শুধু অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারেই নির্দেশনা দিয়েছে। ফাইনাল পরীক্ষা ও শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে ইউজিসির কোনো নির্দেশনা নেই। সারা দেশে অনলাইন ক্লাসের টেকনিক্যাল বিষয়কে ফোকাস করে কোনো প্রশিক্ষণ বা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও নেই। যদিও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের বাইরেও মোটামুটিভাবে মূল্যায়নভিত্তিক পরীক্ষা নেয়াসহ রেজাল্ট প্রকাশ ও অনলাইন ভর্তির ব্যাপারেও অনুমতি দেয়া হয়েছে। ইউজিসির এই নির্দেশনাকে বিবেচনা করলে আপনারা বুঝতে পারবেন যে নির্দেশনাটি পুরোপুরি বৈষম্যমূলক। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের বাইরে ফাইনাল পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অবশ্য আমার জানার ভুলও হতে পারে। আমি নির্ভর করেছি ইউজিসিরি নির্দেশনা থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, উপাচার্য, ডিন ও চেয়ারম্যানরা শিক্ষকদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তার ওপর।

পত্রিকা মারফত জেনেছি, অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকের বেশি ক্লাস হলেও কোথাও কোথাও ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট এমনকি ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়াই ফলাফল দেয়ার নির্দেশনা এসেছে। বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের একটি নির্দেশনা নিয়ে পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ফি, পরীক্ষা ফি ও ভর্তি ফি দেয়ার ব্যাপারে তাগাদা দেয়া হয়েছে। আসলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুনাফার কথা চিন্তা করে প্রচলিত পরীক্ষা কিংবা মূল্যায়ন পদ্ধতি ব্যতিরেকেই রেজাল্ট দিয়ে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য—কত শিক্ষার্থী আসবে, কতজনকে ভর্তি করব, কতজনের কাছ থেকে ফি আদায় করতে পারব। যতই তারা গর্ব করে বলুক অথবা মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে অনলাইন ক্লাসের সফলতার গল্প বলুক না কেন, আমি বিশ্বাস করি, এ আতঙ্কের সময়ে কোনোভাবেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেন না! এবং এদের সবাই যে ধনিক শ্রেণীর শহুরে সন্তান, তাও বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আমার চেনাজানার মধ্যেই অনেকেই আছেন, যারা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এবং মা-বাবার ছোট্ট চাকরির ওপর নির্ভরশীল থেকে পড়াশোনা করেন। অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াই এ পরিবারগুলো বহুকষ্টে তাদের ছেলেমেয়েদের টাকা পরিশোধ করে। আর এই নেতিবাচক সময়ে তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক সংকট আমরা উপলব্ধি করতেই পারি।

আসলে আমার মনে হয়েছে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালগুলোর লাভ-লোকসান-মুনাফার জন্য অব্যাহত চাপের জন্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা এ ধরনের বৈষম্যমূলক নির্দেশনা জারি করেছে। মূলকথা হচ্ছে, নব্য উদারতাবাদের যুগে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চাপে মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এক রকম বাধ্য হয়েই হয়তো এ রকম বৈষম্যমূলক অপরিপক্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আসলে একটি বিষয় আমাদের বুঝতে হবে, যে কারণে করোনা রোগীর ঊর্ধ্বগতির মধ্যেও যেমন ব্যবসায়ী চাপে সরকার গার্মেন্ট, মার্কেট, রেস্টুরেন্ট খুলতে বাধ্য হয়েছে, ঠিক একই ধরনের শিক্ষা ব্যবসায়ীদের চাপেই এই বৈষম্যমূলক পলিসি নিয়ে বাধ্য হয়েছে!   

দ্বিতীয়ত, অনলাইন ক্লাসের সেখানে আরেকটি সমস্যা আছে তা হলো, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সনাতন পদ্ধতির বছর সিস্টেম ও সেমিস্টারের মধ্যে একাডেমিক সূচির পার্থক্য আছে। এই একাডেমিক সূচির ভিন্নতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিভাগ ভেদে কোনো কোনো ব্যাচের এখন পরীক্ষার সময় আবার কোনো কোনো ব্যাচের ক্লাসের সময়। আমি যদি অনলাইন ক্লাস নিই কিন্তু পরীক্ষা না নিতে পারি, তবে যেসব শিক্ষার্থী মাস্টার্স কিংবা অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণ, তাদের কী হবে। যেমন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা এখন তৃতীয় সেমিস্টারে থিসিস ও ইন্টার্নশিপ ফাইনাল ডিফেন্স পরীক্ষার অপেক্ষায়। একই রকমভাবে চতুর্থ বর্ষ স্নাতকের (অনার্স) শিক্ষার্থীদেরও ফাইনাল ভাইভা ও মনোগ্রাফ ডিফেন্সের সময় সামনে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও অর্ডিন্যান্স বিবেচনায় এসব পরীক্ষার সময় অবশ্যই বহিঃপরীক্ষক না এনে পরীক্ষা নেয়ার কোনো বিধি নেই। এখন প্রশ্ন হলো, আমি হয়তো ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী ক্লাস নিতে পারি, কিন্তু লকডাউনের কালে, কঠোর সামাজিক দূরত্ব রক্ষার সময়ে, পাবলিক পরিবহন বন্ধের সময়ে কীভাবে বহিঃপরীক্ষক এনে পরীক্ষা নেই। আর যদি অগ্রাধিকার বিবেচনায় এ দুই ব্যাচের পরীক্ষা না নিতে পারি, তবে অন্যদের ক্লাস চালু রেখে অভ্যন্তরীণভাবেই কি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আরো বেশি বৈষম্য তৈরি করা হবে না?

আরেকটি ব্যাপার হলো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতিরও ভিন্নতা আছে। যার কারণে কোনোভাবে টেনেটুনে ক্লাস নিলেও আমরা সবসময় পরীক্ষা নিতে পারি না। ফলাফল প্রকাশ করতে পারি না। যেমন ধরুন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একক মূল্যায়ন পদ্ধতি থাকার কারণে তাদের দ্বারা দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, প্রতিটি খাতা দুজন পরীক্ষক দিয়ে মূল্যায়ন করতে হয়, যার মধ্যে একজন অবশ্যই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হতে হবে। এর মধ্যে আবার অর্ডিন্যান্স সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় পরীক্ষার আগেই রেজাল্ট দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় ক্লাস নিয়েও পরীক্ষা নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিঃপরীক্ষক স্যাররা খাতা না দেখলে রেজাল্ট প্রকাশ করব কীভাবে? ফলে এখানেও এ নির্দেশনার জন্য বৈষম্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তৃতীয়ত, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বা টাচে থাকা নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাও কিন্তু অনেকটা প্রশ্নবোধক। চলমান পরিস্থিতিতে আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ টাচে আছেন। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ দরিদ্র শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে সাহায্য-সহযোগিতার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ও আলাদা আলাদাভাবে অর্থসহযোগিতা, শিক্ষা উপকরণ সহযোগিতার কর্মসূচি নিয়েছে। চলমান সেমিস্টারগুলোর মধ্যে যেসব সেমিস্টারে থিসিস, ইন্টার্নশিপ, মনোগ্রাফ, প্রজেক্ট, টার্ম পেপার আছে, সেসব বিষয়ে কিন্তু শিক্ষকরা প্রয়োজনে সুপারভাইজ করছেন। অনেককেই দেখছি শিক্ষার্থীদের মননশীল, সৃজনশীল কাজে উৎসাহ, অনুপ্রেরণার দেয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা করছেন। কেউ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য মোটিভেট করছেন। আমি মনে করি, এই ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের যৌথভাবে সৃজনশীল, মননশীল একাডেমিক ইতিবাচক কাজ, দায়িত্ব ও কর্মসূচির সঙ্গে অংশগ্রহণই শিক্ষার অংশ এবং এসবের মাধ্যমেই টাচে থাকা হয়।

প্রবন্ধের কলেবর বিবেচনায় ইউজিসির অনলাইন ক্লাস ও অন্যান্য নির্দেশনার কারণে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার দার্শনিক প্রশ্ন কীভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে কিংবা শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা কীভাবে বৈষম্য তৈরি করে, তা নিয়ে এখানে আলোচনা না করলেও উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা এটুকু বুঝতে পেরেছি যে অনলাইন ক্লাসের নীতিমালা, ছাত্র ভর্তি ও টাকা আদায়ের পলিসি মূলত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষা বাণিজ্য ও মুনাফার চাপের কারণেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি নিয়েছে। এ নীতিমালা বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করবে এবং শুধু তাই নয়, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনগত ভিন্নতা ও প্রকরণগত বৈচিত্র্যের কারণে অভ্যন্তরীণভাবেই তাদের মধ্যে অসমতা তৈরি করবে, যার কারণে তা শিক্ষা ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো সংকট তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস; যা নিয়ে এখনই সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।

 

লেখক: মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, মাভাবিপ্রবি, টাঙ্গাইল


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070168972015381