কন্ট্রোলারের আশ্বাসে ফিরে গেছেন এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাসের দাবিতে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করা পরীক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের পরীক্ষার্থীরা এই ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। শেষ বিকেলে তাদের তোপের মুখে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার (কন্ট্রোলার) অটোপাসের আশ্বাস দেন।এ সময় বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, এই বিষয়টা আসলে তার এখতিয়ার বহির্ভূত। এ বিষয়ে উপর মহলের নির্দেশনা অবশ্যই লাগবে। তার সঙ্গে একমত পোষণ করে আন্দোলনকারীরা আজ মঙ্গলবার শিক্ষা উপদেষ্টার এ বিষয়ক ঘোষণার প্রত্যাশায় শিক্ষাবোর্ড অফিস ত্যাগ করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, দুই মাস ধরে আন্দোলন করেছি। অনেকেই আহত, অনেকে জেল খেটেছেন- এমন পরিস্থিতিতে আমরা পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অবস্থায় নেই। তাই সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ বা অটোপাসের দাবিতে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডে স্মারকলিপি দিয়েছি। আবার কেউ বলছেন অটোপাস চাই না। যে কয়টা পরীক্ষা হয়েছে তার ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করতে।
এদিকে পরীক্ষার্থীদের এই দাবির প্রেক্ষিতে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফোন করেছিলেন আলোচনার জন্য। দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, শিক্ষা বোর্ড এ সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাবো। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটা বাস্তবায়ন করা হবে।
নতুন দায়িত্ব নেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। শিক্ষা বোর্ড কী বলছে বা কী সমস্যা, সেটা শিক্ষা উপদেষ্টাকে অবগত করা হবে। যে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক, তা বোর্ডে জানানো হবে। বোর্ড সেই মোতাবেক কাজ করবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট স্থগিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ করে ঢাকা বোর্ড। প্রকাশিত সূচি অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচি চলাকালে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তিতে ৪ আগস্ট থেকে সব বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ২ আগস্ট স্থগিত নতুন সময়সূচি প্রকাশ করে ঢাকা বোর্ড। সেই সূচি অনুযায়ী পরীক্ষাগুলো ১১ আগস্ট থেকে শুরুর কথা থাকলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় তা শুরু হয়নি। পরে আবার ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়ে নতুন সূচি প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন থেকে শুরু হওয়া এইচএসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। তবে বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডসহ ওই অঞ্চলের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা ৯ জুলাইয়ের পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
অংশগ্রহণ করা পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮১ ও ছাত্রী ৭ লাখ ৫০৯ জন। মোট কেন্দ্র ৭০৭টি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৯০৮টি। গতবছরের তুলনায় চলতি বছরে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৯১ হাজার ৪৪৮ জন। মোট প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৯৪টি, মোট কেন্দ্র বেড়েছে ৬৭টি। গত বছর সব বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৫ লাখ ৩৩ হাজার ও ছাত্রী ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৬০১ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডর অধীনে এবার আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৮৮ হাজার ৭৬ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৪৭ হাজার ৫৯২ জন ও ছাত্রী ৪৪ হাজার ৪৮৪ জন। প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ২ হাজার ৬৮৫টি ও কেন্দ্র সংখ্যা ৪৫২টি।