শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি!

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: যুগ যুগ ধরে চলে আসছে কলেজ প্রশাসনে দ্বৈত শাসন। একটা নিয়ন্ত্রণকারী ও বেতন-ভাতা দেয়ার ক্ষমতার অধিকারী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর অপরদিকে রয়েছে শুধু তালিকা প্রকাশ আর নিয়োগ বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দেয়া। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। যুগ যুগ ধরে তারা এমপিওবিহীন, আদালতের বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি ইত্যাদি চলছে। 

সর্বশেষ বেসরকারি কলেজ পরিচালনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক দুটি বিধিমালায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ উঠেছে। একটি অপরটির সঙ্গে সাংঘর্ষিকও। ফলে দুই বিধিমালার আলোকে কলেজ পরিচালনা করতে গিয়ে নানামুখী ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষকেরা। 

ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের বেসরকারি কলেজগুলো পরিচালনার জন্য ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলি রেগুলেশন’ মানতে হয়। আবার এসব কলেজে নিয়োগ ও পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা’ রয়েছে, যা মানার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে পরিপত্র, সার্কুলার ও নীতিমালা জারির মাধ্যমে বিভিন্ন শর্তারোপ করে। এসব পরিপত্র বা সার্কুলার কখনো কখনো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। 

তিনি বলেন, গত ১১ জানুয়ারি অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে নতুন একটি সার্কুলার জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের কমিটিতে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতিনিধি থাকবেন। পাঁচ সদস্যের এই নিয়োগ কমিটিতে শিক্ষা বোর্ড ও মাউশির একজন করে প্রতিনিধিও থাকতে হবে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে কমপক্ষে তিনজন প্রার্থী থাকতে হবে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী বেসরকারি কলেজসমূহে অনার্স কোর্স পরিচালনার জন্য প্রতিটি বিভাগে সাত জন শিক্ষক থাকতে হবে এবং মাস্টার্স কোর্সে অতিরিক্ত আরো পাঁচজন শিক্ষক, অর্থাৎ মোট ১২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন হবে। প্রতিটি বিভাগে এক জন অধ্যাপক, দুই জন সহযোগী অধ্যাপক, চার জন সহকারী অধ্যাপক ও পাঁচজন প্রভাষকসহ মোট ১২ জন থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় অনার্স কলেজে প্রতি বিষয়ে শূন্য পদে মাত্র তিন জন শিক্ষক নিয়োগের বিধান আছে। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। কোনো কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দিলে তা গ্রহণ করছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বেতন-ভাতা দেয়া হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে তা অবৈধ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিতে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক জন সহকারী অধ্যাপক উক্ত অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদে আবেদন করতে পারবেন। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিমালা অনুযায়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে তিন বছরের অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ পদের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং উপাধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত হিসেবে উচ্চমাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ/ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ/এমপিওতে তিন বছরের সহকারী অধ্যাপক পদে এবং মোট ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার বিধান রয়েছে। ফলে নিয়োগ নিয়ে জটিলতা লেগেই আছে।

আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী, কলেজে শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নিয়োগ নির্বাচনি বোর্ড গঠন করে গভর্নিং বডির মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। অথচ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবরের পর থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডির ক্ষমতা রহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনার্স-মাস্টার্স কলেজে অতিরিক্ত শিক্ষক প্রয়োজন হলে কীভাবে নিয়োগ দেয়া হবে, তার বর্ণনা নেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিমালায়।

শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, কলেজে ডিগ্রি পাস কোর্স অনুমতি নিতে গিয়ে তিন জন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে বেসরকারি ডিগ্রি কলেজগুলো। আর এতেই বিপত্তি ঘটে। দুই জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেও তৃতীয় জন দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত হতে পারছিল না। উচ্চ আদালতে গিয়ে বিষয়টির সমাধান করতে হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি (পাস) কলেজের এই জনবলকাঠামোকে সমন্বয়হীনতার কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে দেশের অনার্স মাস্টার্স কোর্সের ৩৫০টি বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দীর্ঘ ২৮ বছরেও জনবলকাঠামো তৈরি না করায় শুধু অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জনবলকাঠামো অনুযায়ী অনার্স মাস্টার্স স্তরে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধানে এই সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগে আট শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস - dainik shiksha শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম - dainik shiksha মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে অধ্যাপকদের অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু ১ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অধ্যাপকদের অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু ১ সেপ্টেম্বর সব মাদরাসায় ওয়েবসাইট হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসায় ওয়েবসাইট হালনাগাদের নির্দেশ ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024058818817139