দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: শিক্ষিকাকে ইভটিজিং (উত্ত্যক্ত) করার অভিযোগে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাজিম উদ্দিনকে (১৫) স্কুল অফিসে এনে বেত্রাঘাত করেছেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল। তার বেত্রাঘাতের একটি ভিডিয়ো নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ভিডিয়োটি ভাইরাল হলে জেলা জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে এমন ঘটনা ঘটে বলে জানান অধ্যক্ষ তাহেরা বেগম।
সোহেল চাঁদগাজী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। স্কুলছাত্র নাজিম উদ্দিন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মাটিয়াগোদা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে।
ভিডিয়োতে দেখা যায়, নাজিম শিক্ষিকা ও ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করেন সোহেল চৌধুরী। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি ছাত্রের দুই হাতে বেত্রাঘাত করেন। বেত্রাঘাত করতে করতে বলেন, ‘তোমাদের জন্য মেয়েরা স্কুলে আসতে পারে না। তুমি এ সাহস পাও কোথায়? শিক্ষিকা তোমার মায়ের মতো। তুমি যে কাজ করেছ ভবিষ্যতে আর এই কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দাও।
সবার সামনে কান ধরো। কান ধরে বলো আমি আর জীবনে ইভটিজিং করবো না, চারদিকে ঘুরে ঘুরে বলো আমি আর জীবনে ইভটিজিং করবো না। জীবনে এই কাজ আর করবো না। তোমার সঙ্গে আর কে কে আছে এদের নাম বলো।’
এসময় ওই ছাত্র তার সঙ্গে ইভটিজিং-এ জড়িত জনি ও নাঈম নামে দু’জনের নাম উচ্চারণ করে। একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ছাত্রকে প্রতিজ্ঞা করান- ‘ইভটিজিং করা পাপ, খারাপ কর্ম, আমি জীবনে এ কাজ করবো না। মেয়েরা সবাই আমার বোন। এদেরকে পড়ালেখার সুযোগ করে দেবো। আর কখনো ইভটিজিং করবো না। আমি ভালো হয়ে যাবো।’ পরে ছেলেটিকে কানে ধরে উঠবস করে। একপর্যায়ে ছেলেটি চেয়াম্যানের পা ধরে মাফ চাওয়ার চেষ্টা করে। কক্ষে উপস্থিত চেয়ারম্যানের লোকজন মুঠোফোনে ভিডিয়ো ধারণ করে। পরবর্তী সময় তারা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত আইডিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়। ভিডিয়োটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন জন নানা মন্তব্য করেন।
মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘আমি প্রাথমিকভাবে বখাটে ছাত্রটিকে শাসন করি। তবে বিষয়টি বড় কোনো ঘটনা না হওয়ায় আইনের আওতায় আনা হয়নি। এই শিক্ষার্থীকে শাসন করার মাধ্যমে উপজেলার অনেক বখাটে কিশোর-যুবক সতর্ক হবে। তারা আগামীতে ইভটিজিংয়ের পথ থেকে ফিরে আসবে।’ অধ্যক্ষ তাহেরা বেগম জানান, একজন শিক্ষককে ইভটিজিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার শাসন করতে স্থানীয় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সামান্য প্রহার করেছেন। তবে শাসনের ভিডিয়ো ভাইরালের বিষয়টি তিনি অবগত নন।
পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, ‘ইচ্ছে করলেই যে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। যদি কেউ অন্যায় করে তাকে প্রশাসনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। তবে উপজেলা চেয়ারম্যানের বেত্রাঘাতের বিষয়টি তিনি অবগত নন বলেও জানান।’ কবি মনজুর তাজিম বলেন, ইভটিজিং-এ জড়িত কিশোরটি অপ্রাপ্তবয়স্ক। তার শাস্তির বিষয়টি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়াটাও অনৈতিক। জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।