শিক্ষিকার হেনস্তার ভয়ে আতঙ্কে প্রধান শিক্ষক

নোয়াখালী প্রতিনিধি |

নোয়াখালীর হাতিয়ায় ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জিন্নাত আরা বেগমের হেনস্তার ভয়ে ‘তটস্থ’ প্রধান শিক্ষক নুর উদ্দিন তানভীর। তার দাবি, ঠিকমতো বিদ্যালয়ে আসেন না সহকারী শিক্ষিকা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে একদিন অনুপস্থিত দেখানোয় এখন তাকে ‘যৌন হয়রানি’ মামলাসহ শারীরিক নির্যাতনের ভয় দেখাচ্ছেন জিন্নাত আরা।

  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ম্যাকপার্শ্বান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন সাতজন। বিদ্যালয়ের পাশেই শিক্ষিকা জিন্নাত আরার বাড়ি। একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসান উদ্দিন বিপ্লব (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) তার বড় ভাই, সহকারী শিক্ষিকা খাদিজা খাতুন তার চাচি, শাহেনা বেগম ও মহিমা বেগম তার ফুপু। জিন্নাত আরা ও তার পরিবারের শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে ‘অনৈতিক সুবিধা’ আদায়ে হেরফের হলেই অন্য শিক্ষকদের নানাভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক নুর উদ্দিন তানভীর বলেন, ‘বাড়ির দরজায় বিদ্যালয় হওয়ায় শিক্ষিকা জিন্নাত আরা ইচ্ছামতো বিদ্যালয়ে আসেন আবার বাড়ি চলে যান। কিছু বললে স্থানীয় মাস্তান দিয়ে হেনস্তাসহ নানা ধরনের ভয় দেখান। গত ১২ মার্চ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম মোবাইলে শিক্ষকদের উপস্থিতি যাচাইকালে শিক্ষিকা জিন্নাত আরাকে অনুপস্থিত পান। তার নির্দেশে হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত দেওয়া হয়। এর জের ধরে জিন্নাত আরা আমার দিকে তেড়ে আসেন এবং অকথ্য গালিগালাজসহ যৌন হয়রানি মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। তার ভয়ে আমি তটস্থ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

আরেক সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘শিক্ষিকা জিন্নাত আরার বড় ভাই সহকারী শিক্ষক হাসান উদ্দিন বিপ্লব বিগত সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। ম্যাজিস্ট্রেট তাকে কারাগারে পাঠান। বর্তমানে তিনি সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় আছেন। এ ঘটনার জন্য জিন্নাত আরা ও তার ভাই আমাকে দায়ী করে সন্ত্রাসী নিয়ে বিদ্যালয়ে এসে নাজেহাল করে আসছেন। প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় আমি হাতিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। এজন্য ক্লাস শেষে বিদ্যালয়ে না বসে বাইরে ঘোরাঘুরি করি।’

সহকারী শিক্ষিকা জিন্নাত আর বেগমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়ে চলেন জিন্নাত আরা। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তাকে এ বিদ্যালয় থেকে অন্যত্র বদলির জন্য রেজুলেশন করে কর্তৃপক্ষকে লিখতভাবে জানানো হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। জিন্নাত আরাসহ তাদের পরিবারের শিক্ষকরা মন চাইলে বিদ্যালয়ে আসেন এবং হাজিরা খাতায় সই করে চলে যান। জিন্নাত আরার স্বামী শরীফুল ইসলাম উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার সখ্য আছে। শরীফুল ইসলামের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না।

মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরীফুল ইসলাম ও সাময়িক বরখাস্ত সহকারী শিক্ষক হাসান উদ্দিন বিপ্লবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে হাতিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে শিক্ষিকা জিন্নাত আরা বেগমকে শোকজ করা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে হাজির হয়ে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন বলেন, সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদের করা অভিযোগটি থানায় সাধারণ ডায়েরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

অভিযুক্ত শিক্ষিকা জিন্নাত আরা বেগম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘একজন পুরুষ একজন নারীর কাছে কী চাইতে পারে? আমি তার (প্রধান শিক্ষকের) অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এখন তিনি আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছেন।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) ফেরদৌসী বেগম বলেন, সহকারী শিক্ষিকা জিন্নাত আরা বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা - dainik shiksha আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050311088562012