শিবির সন্দেহে চবি শিক্ষার্থীকে পি*টি*য়ে পুলিশে দিলো ছাত্রলীগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চবি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রের পরিবারের দাবি, অপহরণের পর চাঁদা না দেওয়ায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশে দিয়েছে। তবে ছাত্রলীগের দাবি, ওই ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশে দিয়েছে।

গত মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই শিক্ষার্থীর নাম মনিরুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁর বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ থানার দক্ষিণ রাজারামপুর গ্রামে। তিন ভাইবোনের মধ্যে মনিরুল সবার বড়।

মনিরুলের মা সালেহা আক্তার বলেন, গত সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে তাঁর ছেলে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা চান। টাকা না দিলে মনিরুলকে মেরে ফেলা হবে—এমন বিষয়ও জানানো হয়েছিল। তাই রাত তিনটা থেকে চারটার মধ্যে তিন দফায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা একটি বিকাশ হিসাব নম্বরে পাঠান। পরে জানতে পারেন, তাঁর ছেলেকে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে।

সালেহা আক্তার দাবি করেন, তাঁর ছেলে কখনো রাজনীতি করেনি। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। বাড়ি থেকেও কিছু টাকা নিতেন। কী হয়েছে, কোন মামলায় থানায় আটক করা হয়েছে, তা তিনি জানেন না। তাঁর ছোট ছেলে রফিকুল ইসলাম এসব জানতে চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন।

পরে রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার বেলা দেড়টায় একজন পুলিশ সদস্য হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিয়েছিলেন। তখন তিনি মনিরুল ইসলামকে দেখিয়ে পরিচয় জানতে চান। তিনি ভাই পরিচয় দিলে দ্রুত কিছু টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম আসতে বলেন। পরদিন সকালে জানতে পারেন তাঁর ভাইকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বড় ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন রফিকুল। মনিরুলের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, মনিরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলক্রসিং এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের ছয় থেকে সাতজন কর্মী তাঁর ভাইকে ওই বাসা থেকে অপহরণ করেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দিকে নিয়ে লাঠিসোঁটা দিয়ে পেটাতে থাকেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে ৫০ হাজার টাকা আনলে ছাড়া হবে—এমন শর্ত দেওয়া হয়। বাধ্য হয়ে মনিরুল বাড়ি থেকে টাকা চান।

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আনুমানিক পাঁচটার দিকে তাঁর ভাইকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। তবে পুলিশ অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাঁর ভাইয়ের নামে মামলা দিয়েছে। তিন মাস আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা যেসব শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছিল, সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

যা বলছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ
এদিকে মনিরুল ইসলামকে বাসা থেকে তুলে আনা ও পুলিশে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তবে মারধর ও পরিবার থেকে চাঁদা দাবির বিষয়টি বানানো বলে দাবি করেছেন তাঁরা। ছাত্রলীগের যে অংশ এ ঘটনায় জড়িত, তারা উপপক্ষ সিক্সটি নাইনের কর্মী হিসেবে পরিচিত। উপপক্ষটির বর্তমানে ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম। তিনি নিজেকে সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন।

জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘মনিরুজ্জামান শিবিরের সাথি। এর যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নাশকতা করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। এ জন্য বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের থেকে মাসিক ও বার্ষিক চাঁদা সংগ্রহের কাজ করছিলেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে পেরে তাঁর জুনিয়ররা মনিরুজ্জামানকে হাতেনাতে ধরে।’

সাইদুল ইসলাম আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের থেকে সংগঠনের জন্য নিয়মিত চাঁদা তোলার হিসাব, কাগজপত্র, বই ও মুঠোফোন ঘেঁটে শিবিরের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হওয়া কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী নানান কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। এ কারণে তাঁকে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ আইন অনুযায়ী যে ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেবে। মারধর ও চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি বানোয়াট।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় ছাত্রলীগের কয়েকজন এক ছাত্রকে ধরে আমাদের কাছে নিয়ে এসেছিল। তাঁরা ওই ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করে বলে জানিয়েছিল। পরে উত্তেজনা থামাতে ওই ছাত্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে হাটহাজারী থানায় পাঠানো হয়েছিল।’ এর বেশি তিনি জানেন না।

পরে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামানের মুঠোফোনে কমপক্ষে ১০ বার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই থানার এক উপপুলিশ পরিদর্শক বলেন, ওই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ভাঙচুরে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ
শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতারের বাসভবন, পরিবহন দপ্তর, পুলিশ বক্স ও শিক্ষক ক্লাব ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল। এতে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় ভাঙচুর, ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।

দুটি মামলাতেই ৭ জন করে ১৪ জনকে চিহ্নিত করে আসামি করেছিল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১২ জনই শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন উপপক্ষের নেতা-কর্মী। তবে এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029590129852295