প্রাথমিক শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের হোম ওয়ার্ক দেবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এর কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছে এনসিটিবি ও নেপ। প্রাথমিক শিক্ষকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা সংক্রমিত করে ফেরিওয়ালার মত ঘুরবেন। শিক্ষক শিক্ষার্থীর বাড়ি গেলে স্বাভাবিকভাবে ছোটখাটো একটা সমাবেশ তৈরি হবে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে বিস্কুট বিতরণ ও শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পড়াশুনায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাড়ি বাড়ি দিয়ে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হন। এঁদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষকতার সুযোগ হারিয়ে পরপারে চলে গেছেন। এদিকে অনলাইনে শ্রেণির কার্যক্রম চালুরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে, বর্তমানে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী এ কার্যক্রমের আওতায় আসবে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষা পরিবারের নতুন সদস্য ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
হোম ওয়ার্কশিট বা পাঠ পরিকল্পনা সংগ্রহ ও পৌঁছানো সাধারণত শিক্ষার্থীরা করে থাকেন। কোন নির্দিষ্ট স্থান বা বিদ্যালয় থেকে নির্দিষ্ট সময়ে সংগ্রহ করতে গিয়ে সাধারণত একটা জটলার সৃষ্টি হবে। এতেও করোনা সংক্রোমিত হওয়া স্বাভাবিক। মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা খুব সহজে বাড়ি বাড়ি ঘুরে করোনার ফেরি করার দৃশ্য ভুলে গেছেন বা প্রাথমিক শিক্ষকদের মৃত্যুকে তুচ্ছ মনে করছেন।
করোনা শুরু হওয়ার আগে বিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়ে অনেক অভিভাবকদের মাঝে অতৃপ্তি দেখেছি। করোনায় স্কুল বন্ধ হওয়ায় বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের প্রতি তাদের ভালবাসা জন্মাতে দেখছি। এখন তাদের একটাই প্রশ্ন কবে বিদ্যালয় খুলবে? আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবই খোলা রয়েছে।
তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ তদারকির অভাবে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা। তবে বেশির ভাগ জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধিদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তেমন কার্যকর ব্যবস্থা দৃশ্যমান নেই। শুধু কোন কোন স্থানে স্বল্পমূল্যের মাস্ক বিতরণের মাধ্যমে মিডিয়ায় সংবাদের শিরোনাম হতে দেখা গেছে। জনগণকে কার্যকর স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করার জন্য তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি দলবলসহ সর্বদা রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ দৃশ্যমান করতে হবে। ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন মেম্বার, চেয়ারম্যান কাউন্সিলর তার এলাকার স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে কাজ করবেন। বাঙালির জাতির গর্ব আমাদের সেনাবাহিনীকে এ দুর্যোগে দেশবাসীর পাশে দাড়ালে ‘স্বাস্থ্যবিধি বাঙালি মানে না’- এ অপবাদ থাকবে না। জাতি রক্ষা পাবে করোনা ভাইরাসের মতো অতিমারির এ ভয়াবহ ছোবল থেকে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
শিক্ষার্থীর প্রিয় বিদ্যালয় কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবেশ অনুযায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে ১টি শ্রেণির কার্যক্রম চালু করা হোক। এতে পরবর্তী হোম ওয়ার্ক দেয়ার জন্য শিক্ষকদের করোনার ফেরিওয়ালা কাজটি করার প্রয়োজন নেই। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা এতে কম হবে। ৬ মাস পর্যন্ত শিশুর জন্য যেমন মায়ের দুধের বিকল্প নেই। তেমনি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে গুরুত্ব অপরিসীম। যা বর্তমানে জনগণ, শিক্ষার্থীরা হৃদয়ের মাঝে অনুভব করছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে এদেশকে মুক্ত করতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার বিষয়টি আর কারো ভিন্নমত নয়। আগামী প্রজন্মের বিকাশ বাধাগ্রস্থ হলে, ব্যবসা, বাণিজ্যসহ যত উন্নয়ন হোক না কেন জাতির অগ্রগতি পিছনের দিকে ধাবিত হবে। এ থেকে জাতি মুক্ত থাকুক। জয় বাংলা। বাংলাদেশ চিরজীবি থাকুক।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।