শেকৃবির গৌরবের ১৭ বছর, ঐতিহ্যের ৭৯ বছর

মো. মমিন সরকার |

সবুজ শ্যামল প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরপুর শহরের কোলাহলমুক্ত ঢাকার বুকে আধুনিক গ্রাম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। গৌরব ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিষ্ঠানটি গত ১৫ জুলাই পদার্পন করল ১৮ বছরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের ইতিহাস ১৭ বছরের হলেও দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম কৃষিশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর ইতিহাস দীর্ঘ ৭৯ বছরের। ব্রিটিশ শাসিত বাংলায় বারবার দুর্ভিক্ষের হানা রোধকল্পে ১৯৩৮ সালে তত্কালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রথম কৃষি প্রতিষ্ঠান ‘বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউট’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলায় উচ্চতর কৃষিশিক্ষা, কৃষিগবেষণা ও কৃষিসম্প্রসারণের এক নবধারা সূচিত হয়। পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ‘ইস্ট বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউট’ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ‘বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউট’। তবে সর্বসাধারণের কাছে এটি ইন্সটিটিউট হিসেবে পরিচিতি না পেয়ে ‘কৃষি কলেজ’ হিসেবেই খ্যাতি লাভ করে। ২০০১ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইন্সটিটিউটের হীরক জয়ন্তী অনুষ্ঠানে তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। ঐ বছর ৯ জুলাই জাতীয় সংসদে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয় এবং ১৫ জুলাই শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

কৃষি অনুষদ দিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে দেশ ও জাতির চাহিদা পূরণে খোলা হয়েছে এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদ, এনিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেনারি মেডিসিন অনুষদ এবং ফিশারিজ অ্যান্ড একুয়াকালচার। চারটি অনুষদের অধীনে ৩৫টি বিভাগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুতল বিশিষ্ট গ্রন্থাগারে রয়েছে ৩৫,৫০০টির অধিক বই, ৪১০০টি দেশীয় জার্নাল, ৬১০০টি বিদেশি জার্নাল। যুক্ত করা হয়েছে ডিজিটাল ই-লাইব্রেরি।

শেকৃবির শিক্ষক-গবেষক-ছাত্ররা রিসার্চ সিস্টেম (সাউরেস) এবং ড. ওয়াজেদ মিয়া গবেষণাগারের মাধ্যমে গবেষণা করে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে যাচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র এ এস এম কামালউদ্দিন দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে দিয়েছেন অমৃত কলার চাষ। কাজী পেয়ারার জনক ড. কাজী বদরুদ্দোজা এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। বর্তমানে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে সাউ সরিষা-১, সাউ সরিষা-২, সাউ সরিষা-৩, মধু চাষ, নন্দিনী ফুল, ক্যান্সার প্রতিরোধী টমাটিলো, ছাদ বাগান, ইকো সেন্টার, সাদা ভুট্টা, স্পিরুলিনা চাষ, হাইড্রোপনিক্স, এন্টিবায়োটিকের বিকল্প প্রোবায়োটিকের আবিষ্কার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

গবেষণাকে আরো বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও ৮৭ একরের ছোট্ট ক্যাম্পাসে গবেষণার জায়গা অপ্রতুল। এছাড়া কৃষি অনুষদে রয়েছে শ্রেণিকক্ষ ও ছাত্রদের পরিবহন সংকট।

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা হাজার হাজার কৃষিবিদ এ দেশের কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। আগামী দিনেও গবেষণা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে, দিনদিন সফলতা বহুগুণে বেড়ে যাবে, এগিয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়। পরিণত হবে ‘দ্য সেন্টার অব এক্সিলেন্স’-এ। এটাই কামনা সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-শিক্ষার্থীর।

লেখক: শিক্ষার্থী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

সৌজন্যে: দৈনিক ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036101341247559