বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বুধবার (২১ আগস্ট) আরো তিনটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ তিনটি মামলা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামলাগুলো এজাহার হিসেবে নিতে থানাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজধানীর মিরপুর, রামপুরা ও সূত্রাপুর থানা এলাকায় পৃথক তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলাগুলো করা হয়। সবগুলো মামলাই কমন আসামি হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মামলা ভেদে আসামির ভিন্নতা রয়েছে। শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ নেতাদেরকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার নামে এখন পর্যন্ত ৩২টি মামলা করা হলো। মামলাগুলোর মধ্যে ৩০টিই হত্যা মামলায়। একটি করে মামলা করা হয়েছে গণহত্যা ও অপহরণের অভিযোগে।
হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে হেলিকপ্টার থেকে গুলিতে নিহত হন রংপুর কেমিক্যাল লিমিটেডের অফিস সহকারী ফিরোজ তালুকদার। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন নিহতের স্ত্রী রেশমা সুলতানা। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসানের বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
অপর উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় আসামিদের নির্দেশে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া র্যারের গুলিতে ফিরোজ তালুকদার মারা যান।
রামপুরায় গুলি করে হত্যা
রাজধানীর রামপুরা গোল চত্বরে গুলিতে ইন্ডি রিলস প্রডাকশনের ফ্রিল্যান্স কাস্টিং ডিরেক্টর রাসেল মিয়া হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমীর আদালতে মামলাটি করেন নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার। আদালত জবানবন্দি গ্রহণ করে রামপুরা থানাকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।
অপর উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী মহিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, মাঈনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিআইজি রিপন সরদার, সাবেক ডিবি প্রধান হারন-অর-রশীদ, সাবেক সিটিটিস প্রধান আসাদুজ্জামান, সাবেক র্যাব ডিজি হারুন-অর-রশীদ, ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইকবাল হোসেন, মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম, এডিসি সাব্বির রহমান, র্যাব-১০ এর অধিনায়ক ফরিদ উদ্দিন, রামপুরা থানার ওসি মসিউর রহমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহম্মেদ শামীম।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে উপরোক্ত আসামিদের নির্দেশে অজ্ঞাত আসামির গুলিতে রাসেল মিয়া মারা যান বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
সূত্রাপুরে মাথায় গুলি করে হত্যা
শিক্ষানবীস টেকনিশিয়ান এলেম আল ফায়দি হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামসুল আলম। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালতে এই মামলাটি করা হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সূত্রাপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক কমিশনার ডিএমপি হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, ওয়ারীর ডিসি ইকবাল হোসেন, ঢকা-৬ আসনের সাবেক এমপি আবু সাইদ খোকন, ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি সোলাইমান সেলিম, ৩৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী, ৩৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস, ৪৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন, জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন, কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন সাগর, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত মোড়ল, সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিক, জবি ছাত্রলীগের নেতা নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন রাজসহ প্রমুখ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যমুক্ত একটি মানবিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্ররা রাজপথে অবস্থান নেয়। আসামিরা গণভবনে বসে তাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য নির্দেশ দেয়। গত ১৯ জুলাই হেলমেট পরে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ পুলিশ একযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে নিরীহ ছাত্র জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এই গুলিতে এলেম আল ফায়দি নামে একজন শিক্ষানবিশ টেকনিশিয়ান সরকারি কবি নজরুল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।