বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা অনুভব করে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি, যেদিন বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ঐতিহাসিক এই ঘটনার সঙ্গে আরো একটি ঘটনার সাদৃশ্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাটিও।
দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসন জীবনের পর জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের বাধা, ভয়-ভীতি আর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মাটিতে প্রবেশ করেন শেখ হাসিনা। সময়টা ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে। শেখ হাসিনা তাঁর প্রত্যাবর্তন দিবসেই শপথ নেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের। তারপরই বাংলাদেশে সূচিত হয় ভোট-ভাতের অধিকারের লড়াই। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ বেয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা পান গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে সূচিত হয় রাজনীতি ও সামাজিক উন্নয়ন। তাই শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসটির সঙ্গে আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সাদৃশ্য খোঁজেন সবাই।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন ঢাকার রাজপথে নেমেছিলো জনতার ঢল। সবার চোখের দৃষ্টি ছিলো কুর্মিটোলা বিমানবন্দর। রাস্তার দুই ধারে লাখো মানুষের খণ্ড খণ্ড মিছিল। রাস্তায় নানা প্রকার যানবাহনের সারিবদ্ধ শোভাযাত্রা। উপলক্ষ্য, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘ ছয় পর ঢাকায় আসছেন। দিনমজুর এক রিকশাচালকের উক্তি ‘দেইখ্যা আসেন কুর্মিটোলা এয়ারপোর্ট, শেখের বেটির লাগি কাতারে কাতারে মানুষ জমছে সকাল থাইক্যা। শেখ মজিবর যেই দিন ফিরছিল যুদ্ধের পর, এমুন মানুষ সেই দিনও হয় নাই।
সচিত্র সন্ধানীর রিপোর্টের ভাষায়: বিমানবন্দরের কাছাকাছি অপেক্ষমাণ জনতার কোঁচড়ে মুড়ি-চিড়ার স্পষ্ট আভাস দেখা যাচ্ছিলো। দূর থেকে যাত্রা করে তাঁরা এসেছেন। অসুস্থ, রুগ্ন, কিশোর-যুবক বাদ যাননি। সবার চোখ রানওয়ের দিকে। আসমানের অবস্থা দুইদিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে। কী জানি কেমন যাবে আজকের দিন। কালো মেঘ জমছে। বিমানবন্দর ছেয়ে গেছে গাড়ি আর মানুষে। ভিআইপি লাউঞ্জে ঢোকার গেট, গেটের ওপর ছাদ, লোকে লোকারণ্য। মানুষের চিৎকার, কথা, ঠেলাধাক্কা সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে শেখ হাসিনার আগমনবার্তা।
কুর্মিটোলা বিমান বন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর, জনস্রোতে মিশে প্রায় তিন ঘণ্টায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শেরেবাংলা নগরে পৌঁছালেন। সেদিন ঝড়-বৃষ্টিতে নগরজীবন বিপন্নপ্রায়। রাস্তা-ঘাটে স্বাভাবিক জীবন কার্যত অচল। তবে ঝড়-বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি জনতার ভালোবাসার কাতারে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ উপেক্ষা করে শেরেবাংলা নগরে তখন অপেক্ষায় লাখ লাখ মানুষ।
একদিকে সব হারানোর বেদনা, অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি এমন এক অমানিশার যুগে তিনি ফিরেছিলেন বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। সেই থেকেই তিনি স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির টার্গেট হয়ে আসছেন বারবার। মৃত্যু তাঁর পিছু সারাক্ষণ, তারপর অবিরাম পথচলা বাংলার পথে-প্রান্তরে। বহুবার তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সৃষ্টির অপার কৃপায় এখনো বাঙালির ভাগ্যবিধাতা তিনি। আজ তাঁর ৪৩তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিন দেশে ফেরেন তিনি। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দিন শেখ হাসিনা ছোটো বোন শেখ রেহানা, স্বামী ও দুই সন্তানসহ তখনকার পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ১০ দিন পর ২৫ আগস্ট সকালে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে শেখ হাসিনা স্বামী ওয়াজেদ মিয়া, বোন শেখ রেহানা, শিশুপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শিশুকন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ দিল্লি পৌঁছান। ভারতে তখন জরুরি অবস্থা চলছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন কোনো খবরাখবর ভারতের পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে না। কাজেই তখনকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি একরকম অন্ধকারেই ছিলো। দিল্লিতে পৌঁছানোর দুই সপ্তাহ পর ওয়াজেদ মিয়া ও শেখ হাসিনা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎ পান। সেখানেই শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা জানতে পারেন। এরপর ভারতেই নির্বাসিত সময় কাটে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার। স্বৈরাচারি সরকারের রাজনৈতিক বৈরি পরিবেশ কাটিয়ে ১৯৭৯ ও ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময় দিল্লি যান তাদের খোঁজখবর নিতে। এরপর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন কয়েক দফায় দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা খবর পান, ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাঁকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এর এক সপ্তাহ পরে আওয়ামী লীগের সেই সময়ের শীর্ষ নেতারা দিল্লি যান। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি বৈঠক করেন এই শীর্ষ নেতারা। এদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মান্নান, আমির হোসেন আমু, বেগম আইভি রহমান, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, গোলাম আকবার চৌধুরী, বেগম সাজেদা চৌধুরী প্রমুখ।
১৬ মে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে দিল্লি থেকে একটি ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছান। ১৭ মে বিকেলে তাঁরা কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আব্দুস সামাদ আজাদ ও এম কোরবান আলী। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, শেখ হাসিনা পঁচাত্তরে যে দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন একাশিতে এসে সেই বাংলাদেশ আর ফিরে পাননি। তিনি যে দেশে ফিরে আসেন, সে দেশ তখন পাকিস্তানের ভাবধারায়। কার্যত যেনো পাকিস্তানের অংশ।
ইতিহাসের পাঠ থেকে জানা যায়, বিমানবন্দর থেকে সোজা মানিক মিয়া এভিনিউয়ে, সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণসংবর্ধনায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদেরকে ফিরে পেতে চাই।’
গণসংবর্ধনায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমি জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য।’ আনন্দঘন ও হৃদয়বিদারক সমাবেশে কর্মীরা মুহুর্মুহু নানা স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছিল: ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব’, ‘শেখ হাসিনা, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। শেখ হাসিনা সেদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। কর্মীদের চোখেও ছিলো অশ্রুধারা। তখন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের জন্য সময়টা খুব খারাপ ছিলো। পঁচাত্তরে খুনিরা তখনো তৎপর সব জায়গায়। খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছিলো স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া। এই বৈরী পরিবেশের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকন্যা পিতার পথ ধরে জীবনের সব ঝুঁকি নিয়ে শুরু করলেন বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রাম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা সেদিন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে বাংলাদেশ হয়তো আজ পাকিস্তানের মতো স্বৈরাচারী, বর্বর-সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হতো। শেখ হাসিনা সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন এবং বাংলার মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অভিসিক্ত করেছেন। দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্বাঙ্গনে। স্বপ্ন দেখছে উন্নত বিশ্বে পা রাখার।
শেখ হাসিনা ফিরে দেশে ফিরে আসার পূর্বে ৬ বছর স্বৈরশাসকরা নানা গুজব ও প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বোঝাতে চেয়ে তারাই জনগণের মুক্তিদাতা। কিন্তু সাধারণ মানুষের কন্ঠে ক্ষণে ক্ষণে উচ্চারিত হতো প্রতিবাদের ভাষা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি ছিলো, সকলের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা। সামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকায় জনগণের সুশাসনের দাবি নিয়ে শেখ হাসিনা রাজনীতির মাঠে এক অকুতোভয় অক্লান্ত কর্মী হয়ে উঠেছিলেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শাসনকাল সম্পর্কে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেয়া, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হয়ে উঠছিলো তাঁর জীবনের চরম দায়িত্ব। দেশে ফেরার প্রতিক্রিয়ার আবেগ আপ্লুত নানা বর্ণনা আছে তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থগুলোতে।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে ঢাকার মাটি ছুঁয়ে যে কথা তিনি দিয়েছিলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন আজও। একইভাবে সেদিন ঢাকা শহরে লাখ লাখ কর্মী যে শপথ নিয়েছিলেন দেশের সব পরিস্থিতিতেই তাদের মায়ের মতো, বোনের মতো শেখ হাসিনাকে আগলে রাখবেন, সেটিই তারা প্রমাণ করেছেন। বাংলাদেশে বারবার সংকটাপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, স্বাধীনতাবিরোধীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে; হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার নেতৃত্বে একজন মানবিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়, বিএনপি জামায়াতের মুখোশ উন্মোচিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রুদ্ধদ্বার হয় উন্মোচিত। নানা চড়াই-উৎরাই ও ষড়যন্ত্রের কণ্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সম্ভাবনার উদীয়মান এক অর্থনীতি। বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখানেই।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। দেশব্যাপী অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেলের মতো মেগাপ্রকল্প নিজেদের প্রচেষ্টা-উদ্যোগে বাস্তব, রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও আন্তনগর যাতায়াত ব্যবস্থার দৃষ্টিনন্দন উন্নতি হয়েছে। ঢাকার আকাশে মেট্টোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস, বিশাল বিশাল ফ্লাইওভার আজ স্বপ্ন নয়, বাস্তব। শেখ হাসিনার নেত্বত্বেই আকাশ, পাতাল, জল-স্থল সর্বত্র যোগাযোগের রাস্তা উন্মুক্ত হয়েছে। দেশ আজ আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপান্তরের পথেও এগিয়ে যাচ্ছে।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ১, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় ঈর্ষণীয়। যেখানে ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলোও লক্ষ্য অর্জনে হিমশিম খাচ্ছে। কৃষি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকারের প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপরিকল্পিত উদ্যোগী ভূমিকাও এই সাফল্যের খাতায় উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিকভাবে অভাবনীয় সম্মানের অবস্থানে এসে পৌঁছেছে।
শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। স্যাটেলাইট-১-এর উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আকাশ বিজয় করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আকাশ সমুদ্র-সীমান্ত বিজয় পূর্ণ হয়েছে। সব শর্তপূরণ করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ২৭৪৯ (২০২২-২৩ অর্থবছর) মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক অনেক সূচকে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধাপে ধাপে পূরণ হয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে ঈষর্ণীয় পরিবর্তন। এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারার জন্য অর্জন করছেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মান। করোনা পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্ব যখন পর্যুদস্ত, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ তখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে উত্তীর্ণ।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার এবং বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক আদর্শের লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ্য অনুসারী। তাঁর নেতৃত্বে আজ সারা বিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে। ৪৩ বছর পূর্বে দেশে ফিরে এমন বাংলাদেশের স্বপ্নের মশাল প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন শেখ হাসিনা-যেখানে স্বাধীনতা এখন ভয় শূন্য, চিত্ত এখন মুক্ত। এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ির তকমা লাগানো দেশগুলোই এখন বলছে- ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়, সব দেশের কাছে অনুকরণীয় এক রোল মডেল’। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রতিশ্রুতি পালন এবং অভীষ্ঠ লক্ষ্য অর্জনে শেখ হাসিনা সর্বদা নিবেদিতপ্রাণ।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে ব্র্যাকেটবন্দি করে রেখেছিলেন। তখন সারা দেশের কর্মীরা ছিলেন হতাশ। প্রশ্ন ছিলো কে তৃণমূলের এই সংগঠনটির হাল ধরবেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। সেই বাস্তবতায় শেখ হাসিনা ফিরে আসার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা যেদিন দেশে পা রাখলেন, সেদিনই মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে, আওয়ামী লীগ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে। তাঁর সংগ্রামী নেতৃত্ব বাংলাদেশের উচ্চতা আজ হিমালয়সম। এর সূত্র ধরে বলতে চাই বিশ্বের কোনো জাতির ভাগ্যোন্নয়নে শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবনের মতো কাউকে এতো আত্মত্যাগ, এতো লড়াই করতে হয়েছে এই ইতিহাস খুঁজে পাওয়া কঠিন। এক রাতে ঘাতকের হাতে বাবা-মা-ভাইসহ ১৮ জন নিকটজন হারানো। তারপর দীর্ঘদিন নিজের দেশে ফিরতে না পারা। দেশে ফিরে যেখানে গেছেন তিনি বাধার মুখে পড়েছেন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। সারা দেশে তিনি সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন। শত বাধার মুখেও গণতন্ত্রকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফিরে এসে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করা তাঁর চ্যালেঞ্জ ছিলো, তিনি শত বাধা পেরিয়ে প্রায় সকল ক্ষেত্রেই সফল তিনি। ঐক্যের প্রতীক হিসেবে তিনি যাত্রা শুরু করেছিলেন। নতুন প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন, দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। সহজ করে বললে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের সৎ, যোগ্য, কর্মঠ, মানবতাবাদী গণতান্ত্রিক নেতা। গণতন্ত্রের মানসকন্যা সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক