শেবাচিমে বিকল আইসিইউর ১০ ভেন্টিলেটর

বরিশাল প্রতিনিধি |

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর মেশিন (কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দেওয়ার যন্ত্র) রয়েছে ১০টি। যার সবগুলোই বর্তমানে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সবশেষ একটি ভালো থাকলে গত ১০ ডিসেম্বর সেটিও বিকল হয়ে পড়ে। অর্থাৎ বর্তমানে এ বিভাগের ১০টি ভেন্টিলেটরই বিকল।

ভেন্টিলেটর মেশিন বিকল হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন মুমূর্ষু রোগীরা (যাদের কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস প্রয়োজন)। বর্তমানে এসব রোগীদের সরাসরি ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও সড়ক কিংবা নৌপথে ঢাকায় যেতে সময় লাগছে ৫-৭ ঘণ্টা। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রাপথেই এসব রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকছে।

এদিকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস প্রয়োজন এমন বেশ কয়েকজন রোগীকে গত কয়েকদিন বরিশাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টার যোগে ঢাকায় নিয়ে গেছেন স্বজনরা। যাদের এয়ারে নেয়ার সামর্থ্য নেই, শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তাদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করতে হয় সড়ক কিংবা নৌপথে।

অপরদিকে প্রয়োজনে আইসিইউ সেবা না পেয়ে ১০ ডিসেম্বর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ডা. মারুফ হোসেন নয়নের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে খোদ চিকিৎসক সমাজসহ তার বন্ধু, সহপাঠী ও স্বজনদের মাঝে দেখা গেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

নয়নের চিকিৎসক বন্ধুদের দাবি, নয়নের ভেন্টিলেশনের খুব প্রয়োজন ছিল। হাসপাতালের একটি মেশিন ভালো ছিল। কিন্তু ১০ ডিসেম্বর সকালে সেটিও বিকল হয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন সিনিয়ররা। তবে এর আগেই না ফেরার দেশে চলে যান নয়ন। গ্রামের বাড়ি ভোলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে তাকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শেবাচিম হাসপাতালের পূর্ব দিকের নতুন দ্বিতল ভবনের নিচতলায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুলাই নিবির পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা হয়। ইউনিটটি চালুর সময় থেকেই রোগীদের জন্য ১০টি আইসিইউ বেড, ১০টি বড় আকারের ভেন্টিলেটর মেশিন, ৩টি ছোট আকারের ভেন্টিলেটর ও মনিটর সরবরাহ করা হয়।

কিন্তু বিগত দুই বছরে একে একে সবকটি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন এ ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে এখানে আসা মুমূর্ষু রোগীদের চলে যেতে হয় ঢাকায়। সেক্ষেত্রে গন্তব্যে পৌঁছার আগেই রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।

এদিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ আইসিইউ’র জন্য সময়ের তাগিদে এখন যেমন ইলেকট্রিক ভেন্টিলেশন মেশিন, উন্নতমানের মনিটর (যেখানে হার্টবিট, ব্লাড প্রেসার, ফুসফুসের-লিভারের কার্যকারিতা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ সম্ভব) প্রয়োজন; তেমনি এজিবি মেশিন, ইলেক্ট্রোলাইট পর্যবেক্ষণ মেশিন, পোর্টেবল এক্সরে, পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর মেশিনেরও প্রয়োজনীতা রয়েছে। পাশাপাশি আইসিইউ রুম অথবা এর পাশেই ডায়ালাইসিস ফ্যাসিলিটেট রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং মেশিন, সিটি স্ক্যান, ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন থাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

অপরদিকে ওয়ার্ডটিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবক-সেবিকা ছাড়া চিকিৎসক নিয়েও রয়েছে সংকট। ওয়ার্ডটিতে কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন দেখা দিলেও রয়েছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। অধ্যাপক থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিক্যাল অফিসার, কোনো পদেই নেই চিকিৎসক।

ওয়ার্ডটির দায়িত্বরত সেবক-সেবিকারা বলেন, গত ২ অক্টোবর আইসিইউ’র নতুন নার্সিং ইনচার্জ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওইদিন তিনি ১০টির মধ্যে দুইটি ভেন্টিলেটর মেশিন সচল অবস্থায় পান। তার দায়িত্ব নেয়ার এক মাস পর আরও একটি ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হয়ে যায়। সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর বাবি একটিতেও যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।

ফলে এখন এ ওয়ার্ডটিতে রোগীর সেবা দেয়া বন্ধই থাকবে বলে জানান তারা।

যদিও ওয়ার্ডটিতে প্রশিক্ষিত জনবল থাকার পর মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে ১০টি মেশিন বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

আইসিইউ’র দায়িত্বে থাকা সহকারী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হুদা বলেন, একটিমাত্র ভেন্টিলেটর মেশিন দিয়ে আইসিইউতে সেবা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ওই মেশিনটিও গত ১০ ডিসেম্বর সকাল ১০টার পর থেকে আর কাজ করছে না। এ কারণেই ডা. নয়নকে ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে ভেন্টিলেটরগুলো একে একে বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল বলেও জানান তিনি।

হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, ভেন্টিলেটর মেশিন নষ্ট হওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আগে থেকেই জানিয়ে আসা হচ্ছে। মেশিন সরবরাহকারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা একবার এসে তিনটি ভেন্টিলেটর সচল করে দিয়ে যান। কিন্তু কিছুদিন পরে তা আবারও বিকল হয়ে পড়ে। আর আইসিইউ’র বর্তমান অবস্থাও কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে, যাতে দ্রুত এর সমাধান ঘটে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি কলেজ কমিটির সভাপতির যোগ্যতা এইচএসসি, গেজেট জারি - dainik shiksha কলেজ কমিটির সভাপতির যোগ্যতা এইচএসসি, গেজেট জারি নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক - dainik shiksha নিজের শিক্ষককে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষক, প্রশংসায় ভাসছে ফেসবুক মাদরাসা শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মদ্যপ অবস্থায় আটক শিক্ষক বরখাস্ত - dainik shiksha মদ্যপ অবস্থায় আটক শিক্ষক বরখাস্ত দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031459331512451