শেষ কর্মদিবসে 'গোপন' সিন্ডিকেট সভায় যা করলেন ববি ভিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী ভিসির শেষ কর্মদিবসে ডাকা `গোপন' সিন্ডিকেট সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (২৭ মে) ঢাকার কলাবাগানের লিয়াজোঁ অফিসে এ সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এতে মোট ১৬ সদস্যের অর্ধেক অর্থাৎ আটজন উপস্থিত ছিলেন। একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে, অন্যান্যরা কেন অনুপস্থিত এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেছেন যারা কানা শুধু তারাই অনুপস্থিত।  এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সভায় যোগ না দেয়া কয়েকজন সদস্য।  

জানা যায়, ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেষ কর্মদিবসের আগের দিন পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ড. ইমামুল হক। শেষ কর্মদিবস ছিল ২৭ মে। সকাল নয়টায় যোগ দিয়ে বিকেল তিনটায় অতি গোপনে  সিন্ডিকেট সভা শুরু করার অভিযোগ উঠেছে।   

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে জানায়, সিন্ডিকেট সভায় ২১ জন শিক্ষক নিয়োগ ও চাকরিরত ৩০ জনের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ৩২ জন কর্মচারী নিয়োগ অনুমোদন নিয়ে কথা হয়েছে। একজন উপপরিচালকসহ কয়েকজন কর্মকর্তা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির কথিত ঢাকা ক্যাম্পাস থেকে কেনা সনদধারীদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভিসির ব্যক্তিগত কিছু হিসেব-নিকেষ ও লেনদেন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও নৈতিক স্খলনজনিত কারণে বরখাস্ত করা রেজিস্ট্রারকে রক্ষার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে মর্মে জানা গেছে। 

তবে, আরও কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে যা পরিস্থিতি বুঝে এবং নতুন ভিসি কে হবেন তা বুঝে প্রকাশ করা হবে। 

শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেয়ায় আন্দোলনের মুখে গত ১১ এপ্রিল থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ছুটিতে যান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হক। তাঁর অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসানকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

 

জানা গেছে, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ফাইল ঢাকায় নেওয়ার জন্যই উপাচার্য ছুটিতে থেকেও পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার উপপরিচালক হুমায়ুন কবীরকে পরিচালকের পাশাপাশি রেজিস্ট্রারের চলতি দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনিও দুটি পদে যোগদানের জন্য পত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা ট্রেজারার ড. এ কে এম মাহবুব হাসান তাঁর যোগদানপত্র অনুমোদন করেননি। একইভাবে উপাচার্য ছুটিতে থেকেও আরও তিনজনকে চলতি দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাঁদেরও যোগদানপত্র ট্রেজারার অনুমোদন করেননি। ফলে উপাচার্য ইমামুল হক যে পরিকল্পনা করেছিলেন তা প্রাথমিকভাবে ভেস্তে যায়। পরে নতুন ফাইল তৈরি করে কর্মকর্তাদের শাস্তি আর পদোন্নতির উদ্যোগ নেন তিনি।

ট্রেজারার অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপাচার্য সোমবার ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে যোগদান করেছেন। শুনেছি, তিনি ঢাকায় সিন্ডিকেটের সভা করছেন। বিধান অনুযায়ী উপাচার্যের নির্দেশক্রমে রেজিস্ট্রার সভা আহ্বান করেন। সে অনুযায়ী এজেন্ডা উল্লেখ করে সদস্যদের কাছে অন্তত ১৫ দিন আগে চিঠি পাঠানো হয়। রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী রেজিস্ট্রার খান সানজিয়া সুলতানা বরিশালে অবস্থান করছেন। আমিও সভার ব্যাপারে দাপ্তরিকভাবে অবগত নই। যদি বিশেষ সভা হয় সে ক্ষেত্রেও ২৪ ঘণ্টা আগে একটা এজেন্ডায় সভা আহ্বান করার কথা। উপাচার্য মহোদয় সোমবার সকাল ৯টায় যোগদান করেছেন। আর সভা শুরু হয় বিকেল ৩টায়।’

আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে ট্রেজারার বলেন, ‘জরুরি সভা হলে তা-ও আমার আহ্বান করার কথা। কারণ ২৪ ঘণ্টা আগে আমিই উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলাম।’ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পদোন্নতি কিংবা শাস্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিধি অনুযায়ী যাদের পদোন্নতি কিংবা শাস্তি দেওয়া হবে তাদের ফাইল সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করতে হয়। ফাইল ছাড়া পদোন্নতি কিংবা শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। বিধি ভেঙে যেহেতু সভা আহ্বান করা হয়েছে, সভায় শাস্তি কিংবা পদোন্নতির ঘটনা ঘটতেও পারে।’

বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার রামচন্দ  দাশ পদাধিকারবলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সভা আহ্বানের বিষয়টি রেজিস্ট্রার চিঠির মাধ্যমে অবহিত করেন। সোমবার (গতকাল) সিন্ডিকেটের সভা আহ্বান করা হয়েছে মর্মে কোনো চিঠি পাইনি। জরুরি সভা হলে মোবাইল ফোনে নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু সে তথ্যও পাইনি।’

এ ব্যাপারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হকের মন্তব্য জানতে দৈনিক শিক্ষার পক্ষ থেকে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036449432373047