শোকজের পর জানা গেলো চবির ছাত্রলীগকর্মী ভুয়া ছাত্র

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম : ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ২৩ নেতাকর্মীকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২২ নেতাকর্মীর হল, বিভাগ ও পরিবারের নিকট শোকজ চিঠি পাঠানো গেলেও একজন কর্মীকে নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রশাসনের। তার নাম এবং রোল নম্বর কিছুই মিলে না। পরে জানা গেল সেই ছাত্রলীগকর্মী চবির ভুয়া ছাত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার ইতিহাস বিভাগের ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সময় নাম ও রোল নম্বর গরমিলে ধরা পড়েন এই ভুয়া শিক্ষার্থী।

জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীর নাম ইমন হাসান রাব্বি (ফেসবুক নাম)। গত দুই বছর ধরে নিয়মিত ইতিহাস বিভাগে ক্লাস করছেন তিনি। থাকছেন আবাসিক আব্দুর রব হলেও। বৃহস্পতিবার ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ২০২ নম্বর ক্লাস টেস্টের সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার সময় ওর নাম না পেলে সন্দেহ হয় কোর্স শিক্ষক গোলাম কুদ্দুস লাভলুর। পরে একান্তে ডেকে নিয়ে তিনি জানতে পারেন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত শিক্ষার্থী না। 

বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস প্রতিনিধি হাসিবুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রথম বর্ষ থেকেই ইমন (ভুয়া নাম) নিয়মিত ক্লাস করত। ২২১০৩১১২ আইডি নম্বরে সে উপস্থিতি দেখাত। তবে এ আইডি নম্বর বাংলা বিভাগে মাইগ্রেশন হওয়া লিমন নামের আরেকজন শিক্ষার্থীর। এ ছাড়া বিভাগের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ট্যুরগুলোতেও সে অংশগ্রহণ করত। কিন্তু প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ইমন অংশগ্রহণ করেনি। তবে যখন রেজাল্ট প্রকাশ হলো তখন সে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানায় তার রেজাল্ট সিজিপিএ ৩.৩৮। ওইদিন আমি খুব অবাক হই। আজ এ ঘটনার পর হলে গিয়ে দেখি ওর আইডি নম্বর, নাম এবং রেজাল্ট কিছুই নেই। এরপর ওর আসল আইডি নম্বর জানার জন্য ওর কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলি কিন্তু ওরা কিছুই বলেনি।

এ বিষয়ে চবির ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস লাভলু  বলেন, গতকাল ২০২ নম্বর কোর্সের ক্লাস টেস্ট ছিল। পরীক্ষা নেয়ার পর স্বাক্ষর করার সময় ওর (ইমন হাসান রাব্বি) নাম ও রোল জানতে চাইলে সে সঠিকভাবে বলতে পারেনি। একবার নিজেকে লাবিব শিকদার নামে পরিচয় দিচ্ছে, তো আরেকবার ইমন হাসান রাব্বি নামে। তখন আমি ধারণা করলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে, ওখানে হয়ত ওর নাম রয়েছে। এজন্য ভয়ের কারণে সঠিক নাম বলছে না। পরে জানা গেল সে এ বিভাগের শিক্ষার্থীই নয়।ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামীমা হায়দারের নিকট জানতে চাইলে তিনি  বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আর আপনারা কেন ইতিহাস ডিপার্টমেন্ট নিয়ে পড়ে আছেন? অন্য ডিপার্টমেন্টও দেখেন এমন অনেক ভুয়া শিক্ষার্থী আছে। তাদের খোঁজ নেন।

এর আগে গত ২১ মে দুপুর ২টায় হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চবির ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে চবি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সিএফসি ও বিজয়ের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ২৩ নেতাকর্মীকে শোকজ করে তদন্ত কমিটি। ২৩ জনের মধ্যে নাম রয়েছে ওই ভুয়া শিক্ষার্থীর।

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ও সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমান  বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যে ২৩ জনকে শোকজ করা হয়েছে তাদের সবার বিভাগ, হল ও পরিবারের নিকট চিঠি পাঠানো হচ্ছে। তবে ইমনের নামে চিঠি দিতে গিয়ে দেখি অ্যাকাডেমিক শাখায় ওর নাম, আইডি নম্বর মিলছে না। তখন আমাদের সন্দেহ হয়। পরে তার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি সে নিয়মিত ক্লাসও করে। এ বিষয়টি আমরা বিভাগের একজন শিক্ষককে জানাই। তিনি বিভাগের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা দেওয়া অবস্থায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অসংলগ্ন উত্তর দিতে থাকে। নিজের নাম-পরিচয় এমনকি মা-বাবার নামও ভুল বলে। পরে ওই শিক্ষক তাকে অফিস কক্ষে যেতে বললে সে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, জানতে পেরেছি সে আবাসিক হলেও থাকে। সে হলে কাদের মাধ্যমে উঠেছে এটাও আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়টিকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে আমরা তার পরিবারের ঠিকানাও পেয়েছি। তার গ্রামে আমরা পুলিশ পাঠিয়ে শনাক্ত করবো। পাশাপাশি এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম - dainik shiksha ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান - dainik shiksha জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি - dainik shiksha কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের - dainik shiksha কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক - dainik shiksha আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051999092102051