দৈনিক শিক্ষাডটকম, দোহার: শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চে এক মেয়ের নাম লেখাকে কেন্দ্র করে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা ও দোহার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রাকিবুল হাসান রাকিব ওরফে রাহিম কমিশনারকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার দোহার উপজেলার সুতারপাড়া আবদুল হামেদ উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় একজন শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করে তারা।
সোমবার (২০ মে) ভোরে তাকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম।[indide-ad-1]
আটকককৃত রাকিবুল হাসান রাকিব দোহার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। একইসঙ্গে ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। বর্তমানে তিনি সুতারপাড়া আবদুল হামেদ উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য পদেও রয়েছেন।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেঞ্চে এক মেয়ের নাম লেখা নিয়ে রোববার টিফিন পিরিয়ডে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহেনশাহের সঙ্গে সহপাঠী সাকিবুলের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শাহেনশাহ ও সাকিবুলের মধ্যে হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। শাহেনশাহ সহপাঠী সাকিবুলকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ক্লাস থেকে চলে যায়।
ওই ঘটনার ৪০ মিনিট পর শাহেনশাহ তার বাবা রাহিম কমিশনার ও বড় ভাই সাফায়েতসহ বহিরাগত ৭ থেকে ৮ জনকে নিয়ে সরাসরি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে সাকিবুলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের সামনেই ওই শিক্ষার্থীদের মারধর করেন শাহেনশাহের বাবা ও বড় ভাইসহ বহিরাগতরা। এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিদ্যালয়ে। ভয়ে ও আতঙ্কে দিকবিদিক ছুটোছুটি করে স্কুল ছাড়ে শত শত শিক্ষার্থী। মারধরের ঘটনায় আহত তিন শিক্ষার্থীকে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।[indide-ad]
ঘটনার সময় দশম শ্রেণির ওই কক্ষে পাঠদান করছিলেন শিক্ষক বোরহান উদ্দিন। ফেরাতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় এই শিক্ষকসহ আরও একাধিক শিক্ষককে।
শিক্ষক বোরহান উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘শিক্ষকতার শেষ জীবনে এসে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে কখনও ভাবিনি। স্কুলে শিক্ষার্থীরা কোনো অন্যায় করলে তা দেখার জন্য আমরা শিক্ষকরা আছি। আমাদের সামনে একজন অভিভাবক বহিরাগত উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের নিয়ে আমার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মারধর করল, এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। ফেরাতে গিয়ে আমাকেও ধাক্কা খেতে হয়েছে। এটা আমার জন্য চরম কষ্টদায়ক।’
সুতারপাড়া আব্দুল হামেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের পাশাপাশি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ওরফে রাহিম কমিশনার অত্র বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। তিনি সবসময়ই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিদ্যালয়ে ঢুকে খারাপ আচরণ করেন। ঘটনার সময় আমি ওই শ্রেণিকক্ষেই ছিলাম। আমি বারবার রাহিম কমিশনার ও তার সঙ্গে আসা ছেলেদের থামাতে চেষ্টা করেছি। আমার কথা তারা শোনেননি। বিদ্যালয়ে মূল্যায়ণ পরীক্ষা চলছিল। এমন ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে সকল শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ত্যাগ করে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।’[indide-ad]
বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে বহিরাগতদের এমন হামলার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। চরমভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে রাকিবুল হাসান রাকিব ওরফে রাহিম কমিশনার বলেন,‘প্রথমে আমার ছেলে শাহেন শাহকে ওর ক্লাসের ৫-৬ জন মারধর করেছে। যে কারণে আমি স্কুলে গিয়েছিলাম।’
পরে তিনি ঢাকাতে একটি মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ কেটে দেন।
উল্লেখ্য যে, রাকিবুল ইসলাম রাকিব দোহার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। একইসঙ্গে ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
দোহার সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দোহার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা দুঃখজনক। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে রাতেই ঘটনায় অভিযুক্ত রাকিবুল হাসানকে আটক করা হয়েছে।’