জালিয়াঘাটা এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও ছাত্রীদের ওয়াশরুম দখল করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস। স্থানীয় সাংবাদকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে গেলে তাদের চলে যেতে বলেন এবং তিনি ছয় বছর ধরে ওই শ্রেণিকক্ষ দখল করে আছেন বলেও জানান। ঘটনাটি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের ফকিরহাট এলাকার।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিন তলাবিশিষ্ট ওই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়তলার পশ্চিম পাশের তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও ছাত্রীদের ব্যবহৃত ওয়াশরুম দখলে রেখে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছয় বছর ধরে বসবাস করছেন প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস। তিনটি শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চ একত্র করে বানিয়েছেন খাট এবং বেঞ্চ একত্র করে রেখেছেন অন্যান্য মালামাল। রান্নার জন্য বারান্দার এক কোণে চুলা বসিয়ে তার পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস ও ১৫ আগস্টের শোক দিবসের ব্যানার ছিঁড়ে বেড়া দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির দুুই শিক্ষার্থী ও ষষ্ঠ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জানায়, শুরু থেকেই স্যার আমাদের শ্রেণিকক্ষগুলো আটকিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকছেন। ছাত্রীদের ওয়াশরুমও দখলে নিয়েছেন। ছাত্রীরা ছেলেদের ওয়াশরুম ব্যবহার করছে। তাছাড়া তার নির্ধারিত তিন থেকে চারজন ছাত্র-ছাত্রী ছারা তাদের রুমে কেউ ঢুকতে পারে না। অনেক ছাত্রী ওই ওয়াশরুমে গেলে তার সামনেই স্যারের খাট রাখা আছে সেখানে থাকেন তিনি, তাই লজ্জায় ভেতরে যেতে পারে না ছাত্রীরা। আমরা কিছু বললে আমাদের মারধর ও টিসি দিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। তাই ভয়েও কিছু বলেতে পারি না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি শ্রেণিকক্ষগুলো দখল করে বসবাস করছেন। তিনি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এগুলো করেছেন। তারা কিছু বললেও হয়রানির শিকার হতে হয়।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস শ্রেণিকক্ষ দখলের কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের ধমক দিয়ে বলেন, আমি সব কিছু ম্যানেজ করেই ছয় বছর ধরে থাকছি। আপনারা নিউজ করে যা করার করেন, দেখি আমার কী হয়। বঙ্গবন্ধুর ছবি ও ব্যানারের বেড়া দিয়ে রান্না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং সাথে সাথেই ভেতরে গিয়ে সেগুলো সরিয়ে ফেলেন। যার ভিডিওচিত্র সাংবাদিকদের মুঠোফোনে ধারণ করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিঁড়ে সেগুলো দিয়ে বেড়া দিয়েছে এটা আমরা জানতে পেরেছি, এটা সে বড় অন্যায় করেছে। আমরা বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগকে জানাব। সে অনেক বছর ধরেই শ্রেণিকক্ষ দখল করে এখানে পরিবার নিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমি জানি তিনি বাসা নিয়ে থাকেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বলেছি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মাদ আল মুজাহিদ জানান, বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ দখল করে পরিবার নিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ডেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।