শ্লীলতাহানির শিকার যশোরের মণিরামপুরের দেলুয়াবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এর প্রতিবাদে গতকাল বুধবার দুপুরে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। পরে তারা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন পলাশ তাদের দাবির কথা লিখিতভাবে জানাতে বলেছে। এর আগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
দেলুয়াবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষর্থী মেহেদী হাসান, মুরাদ হোসেন, সজীব হোসেন, তামিম, অনিক, আবু সাঈদ, অষ্টম শ্রেণীর আল-আমীন, শাহরুক জামান সোহান, মিম খাতুন, সপ্তম শ্রেণির ফারজানা খাতুন, মিমিয়া খাতুন, সাদিয়া খাতুন সহ শিক্ষার্থীরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানায়, ম্যাডামকে শ্লীলতাহানির অপরাধ করলেন প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়, আর শাস্তি দেয়া হল শ্লীলতাহানীর শিকার শিক্ষিকাকে। আমরা এ অন্যায় বিচার মানি না।
প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের বিচারের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা আরও জানায়, তাদের ম্যাডামের সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। যে প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুলের ম্যাডামরা নিরাপদ নয়, সেখানে আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সন্ধিহান। এমন কৃচক্রী প্রধান শিক্ষককে যতদ্রুত সম্ভব বরখাস্ত করা হোক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে আকষ্মিকভাবে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় তড়িঘড়ি করেই পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ অন্যরা বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে তার ব্যবহৃত মুঠোফেনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আনিছুর রহমান তজু শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তার কিছু অনিয়মের জন্য। তবে, সম্প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যাওয়ার বিষয়ে পরিচালনা পর্ষদ কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় সেই শিক্ষিকা মুঠোফোনে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায় তাকে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। যে বিষয়টি বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের জানানো হলেও কোন প্রতিকার হয়নি। এক পর্যায় ওই প্রধান শিক্ষকের কু-দৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে গত ১৪ নভেম্বর মহাপরিচালক, উপ-পরিচালক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। কিন্তু এখনো আমার অভিযোগের বিষয়টি কেউ খতিয়ে দেখেনি। এক পর্যায় ১১ ডিসেম্বর দুপুরে প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়ের কক্ষে আমাকে একা পেয়ে ওড়না ধরে টানাটানি করে। যে ঘটনাকে সামাল দিতেই আমি তাকে জুতা পেটা করি। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলেও প্রধান শিক্ষকের হীন এ কর্মকান্ডের বিচার না করে আমার বিরুদ্ধে খোঁড়া অভিযোগ তুলে ১৩ ডিসেম্বর আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যেটা পক্ষপাতিত্ব ছাড়া কিছুই না।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মৌখিকভাবে বিষয়টি শুনেছি। তবে, আমার দপ্তরে কোন কাগজ-পত্র আসেনি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কবির হোসেন পলাশ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, শিক্ষিকার সাময়িক বরখাস্তাদেশ প্রত্যহারের বিষয়টি বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের এখতিয়ারের মধ্যে। আমি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দিয়েছি বিদ্যলয়ের শিক্ষার পরিবেশে কোন সমস্যা হলে তা লিখিত আকারে জানালে সেটা দেখা হবে।
উল্লেখ্য, মণিরামপুর উপজেলার দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহার রঞ্জন রায়কে গত ১১ ডিসেম্বর তার অফিস কক্ষে সহকারী এক শিক্ষিকা জুতাপেটা করে। অভিযোগ করা হয় ওই শিক্ষিকা ঘটনার সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গেলে নীহার রঞ্জন রায় শিক্ষিকার গায়ের ওড়না ধরে টানাটানি করে। এ ঘটনার পর বিদ্যালয়সহ ওই এলাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।