সংকটে বিবর্ণ ঐতিহ্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পুরান ঢাকার বকশীবাজারে ২ দশমিক ১৫ একর জায়গার ওপর ১৯৪৮ সালে গড়ে ওঠে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ। বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে চারটি অনুষদের অধীন ২০টি বিভাগে লেখাপড়া করছে। ক্যাম্পাসে তিনটি একাডেমিক ভবনের পাশাপাশি রয়েছে প্রশাসনিক ভবন, অডিটরিয়াম ও আকাশলীনা পাঠাগার।

রয়েছে দুটি ছাত্রী হোস্টেল। দুই একর জায়গায় এর বেশি অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব নয়। ফলে শ্রেণিকক্ষ, হোস্টেল, খেলার মাঠসহ নানা সংকট দূর করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন ও হাসান মেহেদী।

ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের ছাত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের প্রথম নারী উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলামও এ কলেজে পড়ালেখা করেছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের আশা অনেক বেশি।

ঐতিহ্যবাহী এ কলেজের ‘নতুন হল’ ও ‘পুরনো হল’ দুটিতে থাকে প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থী। দুটি হলকে ঘিরেই চলে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম। টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের হলে থাকার সুযোগ দিয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাধ্য করেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। কর্মসূচিতে যেতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। বৈধভাবে সিট পাওয়া যায় না এমনও নয়। তবে বছরে সেটা অতি নগণ্য।

অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী প্রীতি আক্তার। পড়ালেখার সুবিধার জন্য কলেজের হোস্টেলে থাকতে চেয়েছিলেন। কলেজ প্রশাসনের মাধ্যমে উঠতে ব্যর্থ হয়ে শরণাপন্ন হন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের কাছে। নেত্রীরা ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে হলে ওঠার আশ্বাস দিলেও শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। প্রীতি আক্তারের মতো সব শিক্ষার্থীকে হলে উঠতে গেলে এ সমস্যায় পড়তে হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী  বলেন, ‘আমার চাচার রাজনৈতিক পরিচয়ে হোস্টেলে উঠেছিলাম। কয়েক মাস থাকার পর হলের পরিবেশ, নিম্নমানের খাবার, নেত্রীদের খারাপ আচরণে বিরক্ত হয়ে চলে এসেছি। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না গেলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হতো, যা সহ্য করা কষ্টকর।’

কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মানবী সরকার বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে মেয়েদের হলে তোলার তথ্য সত্য নয়। এসব কাজ সাবেকরা করে গেছে, এর দায় এখন আমাদের নিতে হচ্ছে। আর রাজনীতি করলে খুশি হয়ে অনেক সময় চা-নাশতা খাওয়ার জন্য টাকা দেয়। সেটাকে যদি বাণিজ্য বলা হয়, তাহলে কিছুই বলার নেই।’

সেশনজট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন যাওয়ার পর সেশনজট আরো জটিল হয়েছে। ঠিকমতো পরীক্ষা না হওয়া, দেরিতে ফল প্রকাশ, গণহারে ফেলসহ নানা কারণে আটকে আছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের হিসাব অনুযায়ী, লেখাপড়া শেষ করে চাকরিতে প্রবেশের কথা থাকলেও তারা এখনো অনার্স শেষ করতে পারেনি।

অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে পরীক্ষা হয়েছে; কিন্তু এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি। অথচ আমাদের ব্যাচের যারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন, তারা শেষ করে ফেলেছে।’

নিম্নমানের খাবার : ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটির একমাত্র ক্যান্টিনে খাবারে বৈচিত্র্য নেই। যা পাওয়া যায়, তা-ই খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। হলের খাবারের অবস্থা আরো খারাপ। প্রতি মাসে ডাইনিংয়ের জন্য হলে থাকা প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দিতে হয় ৮০০ টাকা। এর বিনিময়ে দুপুর আর রাতে দুই বেলা খাবার সরবরাহ করা হয়। রান্না শেষ হলে হলের শিক্ষার্থীদের লাইন ধরে খাবার সংগ্রহ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বেশির ভাগ দিনই যে খাবার সরবরাহ করা হয়, তা মুখে তোলা যায় না। একটু ভালো খাবারের আশায় নিজেরা রান্না করে খায় অনেক শিক্ষার্থী।

পরিবহন সংকট : শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ‘নয়নতারা’ ও ‘মাধবীলতা’ নামে দুটি বাস রয়েছে কলেজটির। কিন্তু বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিপরীতে তা অত্যন্ত অপ্রতুল। দুই বছর ধরে বাস দুটি শুধু উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রায়ই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য বাস দুটি ব্যবহার করেন নেত্রীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভয়ে কিছু বলে না।

ক্লাসরুম সংকট : প্রতিটি বিভাগের জন্য রয়েছে এক থেকে দুটি শ্রেণিকক্ষ। তবে একই সময়ে এক বিভাগে পাঁচটি করে ব্যাচের ক্লাস থাকে। এর ফলে অনেক সময় ক্লাস হয় না। আবার কলেজে বিভিন্ন পরীক্ষা থাকলে ক্লাস বন্ধ থাকে। সিনহা আভসীন সাথী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বছরের চার-পাঁচ মাস বিভিন্ন পরীক্ষার কারণে ক্লাস বন্ধ থাকে। আর ক্লাসরুম সংকটের কারণে শিক্ষকরা ক্লাস নিতে পারেন না।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য : কলেজটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসনে আরা শেফালি বলেন, ‘হোস্টেলে সিট বরাদ্দের ব্যাপারে আমরা সব সময় মেয়েদের বলি আমাদের কাছে আসতে। কিন্তু কিছু ছাত্রী আছে, যারা অন্যদের ধরে। তবে টাকা-পয়সা লেনদেন হয়, এমনটা আমার জানা নেই। দ্বিতীয়ত, আমাদের কলেজে জায়গার প্রচণ্ড সংকট।

ক্লাসরুম বা হোস্টেল যে নির্মাণ করব, তার উপায় নেই। এর পরও ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের প্রকল্প পাস হয়েছে। এটি নির্মিত হলে ক্লাসরুম সংকট কেটে যাবে। আর সেশনজট নিরসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বসেছি আমরা। আশা করছি, সেশনজটের নিরসন হয়ে যাবে। হোস্টেলে আমাদের খাবারের মান কিন্তু ভালো।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006065845489502