সংসদ নির্বাচন ও শিশুশিক্ষার অঙ্গীকার

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
আসন্ন জাতীয় সংসদের সংসদীয় আসনের দলীয় প্রার্থীর চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্যতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। অনেক যোগ্যতম প্রার্থী থেকে মাঠ পর্যায়ের হিসাবনিকাশ, গোয়েন্দা জরিপসহ হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতার মাঝে মনোয়ন দেয়ার মতো কঠিন কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ দেয়াই যেতে পারে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে জনগষের মন জয় করে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে নির্বাচনে সফলতা পাওয়া সম্ভব। সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করা এক দুর্লভ শক্তি, যা সকলের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা। একমাত্র বাঙালি জাতিকে গভীর মমত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে দেশপ্রেম ও ভালোবাসা তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝেও দৃশ্যমান।
 
রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অবশ্যই সততা, দেশপ্রেম, ত্যগ ও সেবার  মাধ্যমে জনগনের অন্তর জয় করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে দেখা গেছে তৃণমুল থেকে বেড়ে ওঠা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে। আমলা বা ব্যবসায়ী নেতাদের সর্বাগ্রে ভাবনা থাকে আর্থিক সংশ্লেষ নিয়ে। রাজনৈতিক নেতার ভাবনায় আসে জনগণ  তথা রাষ্ট্রের কল্যাণ নিয়ে। খুব নগণ্য সংখ্যক আমলা-ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের মাঝে রাষ্ট্রের কল্যাষের চিন্তা সর্বাগ্রে আসে। এখানেই তৃণমুল থেকে বেড়ে ওঠা ও ব্যবসায়ী-আমলা রাজনীতিবিদের পার্থক্য। শেখ হাসিনার মতো এত অর্জন ও উন্নয়ন ৭৫ এর পরবর্তী অন্য কোনো সরকারের মাঝে দৃশ্যমান হয়নি। এর মাঝেও সরকারের কতিপয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সরকারের আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে শিশুশিক্ষা নিয়ে আলোকপাত করছি। 
 
বঙ্গবন্ধু ও তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ প্রেমের পাশাপাশি আগামী প্রজন্ম তথা শিশুদের প্রতি তাদের বিশাল হৃদয়ের ভালোবাসার প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তারা শিশুশিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য প্রথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেছেন। পাশাপাশি দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ বই বিতরণের উৎসবের মাধ্যমে সারা বিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো শিশুবান্ধব এক কথায় শিশুর স্বর্গ হিসেবে অবহিত করা যায়। এতদ সত্ত্বেও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জনবলের মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নেতৃত্বে বিশাল জনবলকে আস্থায় আনতে সক্ষম হয়নি। সরকারি কর্মাচারীদের ৩ ভাগের ১ ভাগ জনবল প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রনালয়ে কর্মরত। তাদের বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের নৈকট্য আনয়নের লক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে অর্ন্তভুক্ত করতে কতিপয় সুপারিশ পেশ করেছে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ। 
 
সুপারিশগুলো হলো-
 
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ঘোষণা মোতাবেক ২৬১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করার বিষয়টি দেশ বিদেশে সর্বমহল জ্ঞাত রয়েছেন। অথচ প্রকৃত অর্থে জাতীয়করণ করা হয়েছে, ২৬১৪৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২য় ধাপের ৪৪টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘ সময় থেকে যাচাই বাচাই করে জাতীয়করণের যোগ্য বিবেচিত হওয়া সত্বেও কী কারণে আজও জাতীয়করণ হয়নি? বিষয়টি বোধনম্য নয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে দীর্ঘ বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখা প্রয়োজন।
 
এতো বিশাল মন্ত্রণালয়, ভাবনাহীনভাবে কর্মরত আছেন, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মরত কর্মকর্তারা। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী শিক্ষাসহ সকল মন্ত্রণালয়ের ক্যাডার সার্ভিস বিদ্যমান থাকার পরেও স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডারের বিষয়টি সম্পর্কে সকলের নীরবতা দুঃখজনক। তৃণমূলের সহকারী শিক্ষকের পদ এন্ট্রি ধরে শতভাগ পদোন্নতির ম্যাধ্যমে মেধাবী, দক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলকে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিয়ে এনে শিশুবান্ধব প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস সৃষ্টি করে বিশাল জনগোষ্টীকে আস্থায় এনে সমৃদ্ধ করতে হবে শিশুশিক্ষা।
 
• শিক্ষক সংকট শূন্য সহিঞ্চুতায় নামিয়ে এনে দূর করা প্রয়োজন শিখন ঘাটতি।
 
• উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রাথমিক শাখা বিলুপ্ত করা প্রয়োজন। এর ফলে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকটের পাশাপাশি মেধাবী, শিশুশিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের তত্ত্ববধায়নে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে আগামী প্রজন্ম।
 
• কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সহজ শর্তে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় এনে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। যাতে দেশের সকল শিশু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে একই ধরনের মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ লাভ করে।  
 
• শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনের লক্ষে সকল শিশুর বিকাল বেলা খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ দিতে হবে। এ সুযোগ নিশ্চিতকরণে বেলা ২টার মধ্যে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সমাপ্ত কারা প্রয়োজন। যাতে শিক্ষার্থী বাড়িতে এসে হাত মুখ ধুয়ে বা গোসল সেরে গরম খাবার খেতে পারেন। খানিকটা বিশ্রাম বা ঘুমিয়ে বিকেলে সুস্থ মন ও শরীর নিয়ে খেলাধুলা বা বিনোদনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
 
• শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার কেন্দ্রবিন্দু হোক বিদ্যালয়। এ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে প্রতিটি পিরিযডের সময়সূচি হোক কমপক্ষে ১ঘণ্টা। ৩০-৪০ মিনিটের সময়সূচি নিয়ে ৬-৭টা পিরিয়ড কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়। পিরিয়ডের সংখ্যা হওয়া উচিত সর্বাধিক ৪টা।
 
• পিটিআই পরীক্ষণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করা জরুরি। শিক্ষকদের একই যোগ্যতা, পাঠ্যক্রম, থাকা সত্বেও বেতন বৈষম্য থাকা কাম্য নয়। 
 
• দপ্তরিদের কর্মঘণ্টা সার্বক্ষণিকের পরিবর্তে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে নির্ধারণ করা যৌক্তিক। তাদের চাকরি রাজম্ব খাতে স্থানান্তর জরুরি। 
 
• সকল শিশুর জন্য অভিন্ন (বই, কর্মঘণ্টা,  ছুটি মূল্যায়ন পদ্ধতি) মাধ্যমে শিশুর শিক্ষার বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন।
 
মুক্তিযুদ্ধের সরকারের নির্বাচনী ইস্তেহারের  মাধ্যমে  অঙ্গীকার হোক শিশুশিক্ষার ভবিষ্যৎ। 
 
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027980804443359