সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে করদাতার আয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বাড়তি কর নেয়া হবে না। এটির মুনাফা থেকে যে উৎসে কর কেটে রাখা হবে, সেটিই চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জারি করা (এনবিআর) প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানান।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে উৎসে যে কর কাটা হতো, সেটিই করদাতার চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচিত হতো। এর ফলে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা করদাতার আয় হিসেবে যুক্ত হতো না। এখন নতুন প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আগের সেই অবস্থাতেই ফিরে গেল এনবিআর।
সঞ্চয়পত্রের সুদ করযোগ্য আয়। আয়কর রিটার্নে এটি করমুক্ত আয় ঘরে দেখানো যাবে না। যদিও সঞ্চয়পত্রের সুদ গ্রাহককে দেয়ার আগেই তা থেকে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখে। আয়কর রিটার্নে সঞ্চয়পত্রের সুদকে আয় হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি তা থেকে যে উৎসে কর কাটা হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে। তবে এই আয়ের ওপর নতুন করে কোনো কর দিতে হবে না।
ধরা যাক, কোনো ব্যবসায়ী বছরে ১০ লাখ টাকা আয় করে। ওই ব্যবসায়ী সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে আরো দুই লাখ টাকা মুনাফা পান। সঞ্চয়পত্রের ওই মুনাফা থেকে ২০ হাজার টাকা উৎসে কর কেটে রাখা হয়। নতুন আয়কর আইনের বিধান কার্যকর হলে সে ক্ষেত্রে করদাতার ১০ লাখ টাকা আয়ের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের ২ লাখ টাকা মুনাফাও আয় হিসেবে যুক্ত হতো। এরপর ওই করদাতার যে কর নির্ধারিত হতো, তা থেকে ২০ হাজার টাকা উৎসে কর বাদ দিয়ে বাকি কর পরিশোধ করতে হতো। এখন বিধানটি বাদ দেয়ায় সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত ২ লাখ টাকা মুনাফা আর আয় হিসেবে যুক্ত হবে না। এ ক্ষেত্রে উৎসে কর হিসেবে কেটে নেয়া ২০ হাজার টাকাই চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে তার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাবদ আয় থাকায় রিটার্নের সঙ্গে তাকে সঞ্চয়পত্রের আয়কর কর্তনের সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দিতে হবে।
গত জুনে পাস হওয়া নতুন আয়কর আইনে সঞ্চয়পত্রের মুনাফাকে করদাতার আয় হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়। এতে ক্ষেত্রবিশেষে করদাতাদের ওপর বাড়তি করের চাপ তৈরির আশঙ্কা দেখা দেয়। নতুন আইনের এটি যুক্ত করার কারণে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর নির্ভরশীল করদাতারা হতাশ হন। সে জন্য এনবিআর বিধানটি বাতিলের উদ্যোগ নেয়।
এছাড়া নতুন আইনে রপ্তানি খাতে সরকারের দেয়া নগদ সহায়তা বাবদ প্রাপ্ত অর্থকেও রপ্তানিকারকের আয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সম্প্রতি জারি করা প্রজ্ঞাপন সেখানেও সংশোধন এনেছে এনবিআর। এর ফলে এখন থেকে নগদ ভর্তুকি থেকে প্রাপ্ত অর্থ রপ্তানিকারকের আয় হিসেবে আর বিবেচিত হবে না। নগদ ভর্তুকির বিপরীতে যে উৎসে কর কাটা হবে, সেটিই চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে গণ্য হবে।