সনদ বিক্রির কারখানা অ্যাডভান্স কোর্সের ১৯ প্রতিষ্ঠান

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী |

নেই ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী ও যন্ত্রপাতির সংকটও চরমে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ক্লাস নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও শুধু শুক্রবার দুই ঘণ্টা ক্লাস নেয়া হচ্ছে।একই নামে একই ভবনে চলছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। স্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও নেয়া হচ্ছে না কর্তৃপক্ষের অনুমতি। অন্য প্রতিষ্ঠানের ভবনে পরিচালনা করা হচ্ছে আরেক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। রয়েছে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানও। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত তিনটি বিষয়ে কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো নীতিমালাই মানছে না।  প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু শিক্ষার্থীদের কাছে সার্টিফিকেট বিক্রির কারখানায় পরিণত হয়েছে। অ্যাডভান্স সার্টিফিকেট কোর্স পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজশাহীর ১৯ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলছে এমন ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতি। 

রাজশাহী মহানগরীতে গ্লোবাল ফাইন আর্টস ইনস্টিটিউট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি কম্পিউটার টেকনোলজি ও ফাইন আর্টস (চারুকলা) বিষয়ে অ্যাডভান্স কোর্স পরিচালনা করে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা নাটোর রোড, ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি স্থান পরিবর্তন করে বাদুড়তলা তালাইমারী এলাকায় ইলিশ (ইনস্টিটিউট ফর লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন স্টাডিজ) নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে।

অন্যদিকে ইলিশ নামের প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমানে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটে শুধু ফাইন আর্টসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নীতিমালা অনুযায়ী ফাইন আর্টসের ল্যাবে যেসব সরঞ্জাম থাকা দরকার তা নেই।

নীতিমালায় ল্যাবে ইজেল ৪০টি, ডংকি ৪০টি, ইন্সট্রুমেন্ট বক্স ২০টি, ডেস্ক টেবিল ২০টি ও ছাপচিত্র মেশিন একটিসহ অন্য শিল্প সরঞ্জাম থাকার বিধান রয়েছে। আর ল্যাবের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৩৫০ বর্গফুট জায়গা। সেটিও নেই। ছোট একটি অপরিচ্ছন্ন ঘরে দু-একটি শিল্প সরঞ্জামের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। নীতিমালা অনুযায়ী এক হাজার ৮০০ বর্গফুট জায়গায় প্রতিষ্ঠান থাকার কথা থাকলেও সেটি নেই। ছোট দুটি ঘরে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এছাড়া এ প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু শুক্রবার দুই ঘণ্টা ক্লাস করার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও মালিক মামুন অর রশিদ তার প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি বলেন, শুধু আমার প্রতিষ্ঠানই নয়, রাজশাহীর কোনো প্রতিষ্ঠানই নীতিমালা মেনে পরিচালিত হচ্ছে না।

কারিগরি বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী এক কিলোমিটারের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান থাকবে না। কিন্তু সেটি লঙ্ঘন করে গ্লোবাল ইনস্টিউিটের পাশেই তালাইমারীতে কার্যক্রম চালাচ্ছে রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চলছে এটির কার্যক্রম। এ প্রতিষ্ঠানটিতে অ্যাডভান্স কোর্স হিসাবে শুধু চারুকলার অনুমোদন রয়েছে। নীতিমালা ভঙ্গ করে একই ভবনে গ্রিন ফিল্ড নামে শিশুদের একটি স্কুলের কার্যক্রমও এখানে পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে চারুকলার জন্য ল্যাব ও কোর্সসংশ্লিষ্ট কোনো সরঞ্জাম দেখাতে পারেননি মালিক এবং পরিচালক এমদাদুল হক।

জানা গেছে, এ ভবনেই নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। কারিগরি বোর্ডের তালিকা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ খড়খড়ি এলাকা হলেও সেখানে এটির অস্তিত্ব নেই। একই ভবনে দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানেও সপ্তাহে সাত দিনের পরিবর্তে শুধু শুক্রবার ক্লাস নেওয়া হয়। মানা হয়নি জনবল কাঠামো। এ দুই প্রতিষ্ঠান থেকে মালিক এমদাদুল হক সাত বছরে সার্টিফিকেট বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কারিগরি বোর্ডের নীতিমালা লঙ্ঘন করে একই ভবনে তিনটি প্রতিষ্ঠান চালানো এবং অন্য অসঙ্গতিগুলোর বিষয়ে তিনিও কোনো জবাব দিতে পারেননি। বরং বলেছেন, সারা দেশেই এভাবেই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

জেলার পুঠিয়া উপজেলা সদরে একই ভবনে পরিচালিত হচ্ছে বন্ধু কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ও বন্ধু টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। এটির একটি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ও অন্যটি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। বন্ধু কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে অ্যাডভান্স কোর্স হিসাবে চালু আছে কম্পিউটার টেকনোলজি। আর বন্ধু টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে চারুকলা, কম্পিউটার টেকনোলজি ও শারীরিক শিক্ষা কোর্স চালু রয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী কম্পিউটার টেকনোলজি ল্যাবে প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জামাদি থাকলেও শারীরিক শিক্ষা কোর্সের জন্য মাঠ ও সুইমিংপুল নেই। নেই ক্রীড়াসামগ্রী। চারুকলার ছোট একটি ল্যাব থাকলেও নেই শিল্পসামগ্রী। এখানেও সপ্তাহে শুধু শুক্রবার ক্লাস নেওয়া হয়।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) প্রকৌশলী আনোয়ারুল কবীর বলেন, আমি মাত্র এক সপ্তাহ আগে যোগদান করেছি। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ইতোমধ্যে পেয়েছি। যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেগুলো যাচাইয়ের জন্য আমরা সরেজমিন প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করব। নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা না হলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন: তৃতীয় দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্ন - dainik shiksha অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন: তৃতীয় দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্ন এমপিও শিক্ষকদের বদলি আবেদন শুরু ১ নভেম্বর - dainik shiksha এমপিও শিক্ষকদের বদলি আবেদন শুরু ১ নভেম্বর পান থেকে চুন খসলেই ঘুষ নেন শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha পান থেকে চুন খসলেই ঘুষ নেন শিক্ষা কর্মকর্তা শিবিরের আত্মপ্রকাশের খবরে জাবিতে প্রতিবাদ মিছিল - dainik shiksha শিবিরের আত্মপ্রকাশের খবরে জাবিতে প্রতিবাদ মিছিল কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করায় সিটি কলেজ শিক্ষক বহিষ্কার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করায় সিটি কলেজ শিক্ষক বহিষ্কার please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0021648406982422