আসন্ন ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে চায় সরকার। এর মাধ্যমে এক পরীক্ষাতেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এরই মধ্যে উন্নত বিশ্বের মতো একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠনের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। তবে এ অভিন্ন পরীক্ষায় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশ নেয়া নির্ধারণ করছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের ওপর।
এ পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ মনে করছেন, সব বিশ্ববিদ্যালয় আন্তরিক হলে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব।
গতকাল সোমবার নিজ দপ্তরে দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে একক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে। পাশের দেশেও এমনটি হচ্ছে। আমরাও সে ধরনের একটি প্রক্রিয়ার কথা ভাবছি। তবে, এ বিষয়ে আরো স্টাডি প্রয়োজন।
দেশের প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অংশগ্রহণে এ পদ্ধতিতে ভর্তি সম্ভব কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর জন্য সবার আন্তরিকতা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই একক ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তরিক হলে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব।
ইউজিসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা হলে স্বল্প সময়ের মধ্যে পাঠদান শুরু করা যাবে। একক ভর্তি পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন করা গেলে সবার কাছে এটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। একক ভর্তি পরীক্ষার সফলতা উচ্চশিক্ষায় বিশাল একটি অর্জন হবে।
জানা গেছে, একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রস্তুতি নিতে বলেছে ইউজিসি। এজন্য গঠিত হয়েছে কমিটি। আগামী শিক্ষাবর্ষে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে এ পরীক্ষা আয়োজন ও এ প্রক্রিয়া কেমন হবে তা যাচাইয়ের কাজ চলছে।
এদিকে ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গত ৩ এপ্রিল ইউজিসি আয়োজিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী জানান, একক ভর্তি পরীক্ষা গ্ৰহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এইচএসসি পরীক্ষার পরে একক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সূচি প্রকাশ করা হবে এবং উচ্চশিক্ষার সবক্ষেত্রে একই সময়ে ক্লাস শুরু হবে।
একক ভর্তি পরীক্ষার মান নিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশে একযোগে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব পরীক্ষার ফলের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠে না। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে এর মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠার সুযোগ থাকবে না।
ইউজিসি জানিয়েছে, গত ৩ এপ্রিলের ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববদ্যিালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠান বিষয়ে একমত পোষণ করেন। ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো এনটিএ গঠন করে একক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে তাতে অংশ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তি থাকা উচিত নয়। তবে, তা নির্ভর করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের ওপর।