সব কোটাই থাকবে, তবে কমবে হার

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের কথা ভাবছে সরকার। তবে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবে না। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর সম্ভাব্য সংস্কার নিয়ে আলোচনার জন্য কমিশন গঠন করা হতে পারে। 

সরকারের একাধিক সূত্র জানায়, কোটার যৌক্তিক সংস্কারের কথা ভাবা হচ্ছে। বিদ্যমান সব কোটাই থাকবে, তবে কমবে হার। কোনো আন্দোলনের চাপে নয়, আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সংস্কার করা হবে। কোন কোটা কীভাবে কতটুকু কমানো যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। সরকার চাচ্ছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান। অনানুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে দফায় দফায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন থেকে ফেরার পরও সরকারের ওপর মহলে আলাপ হয়েছে বিষয়টি নিয়ে। সূত্র জানায়, সরকারদলীয় একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতাও কোটা পদ্ধতির সংস্কার করে তা যৌক্তিক করার পক্ষে। 

বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সমন্বয়কারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সরকারি চাকরিতে কোটার হার নিয়ে আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের মতামত তারা জানতে চাচ্ছেন। অনানুষ্ঠানিক এসব আলোচনার পাশাপাশি তারা আন্দোলনরতদের জনদুর্ভোগের বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানাচ্ছেন।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত সরকারি চাকরির বিভিন্ন পদে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ আদিবাসী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই পাঁচটি কোটার সবই রাখার পক্ষে সরকার। তবে কোটার হার নির্ধারণ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চান তারা। বিশেষ করে এ ক্ষেত্রে সেক্টর কমান্ডার ও সাব-সেক্টর কমান্ডারসহ বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের মতামত নেওয়া হতে পারে। 

সংস্কার বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘কোটার বিষয়টি সরকারের নির্বাহী বিভাগের হলেও, এখন সর্বোচ্চ আদালতে বিচার চলমান। তাই এ মুহূর্তে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয়, তা আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।’ 
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও সম্প্রতি গণমাধ্যমে আদালতের চূড়ান্ত রায়ের পর কোটা পদ্ধতির ‘যৌক্তিক সংস্কারের’ ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের অপেক্ষা করা উচিত।

সরকারি চাকরিতে মোট ২০টি গ্রেড আছে। সরাসরি নিয়োগ হয় মূলত ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এসব চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। ওই বছর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সব কোটা বাতিল করা হয়। তবে ১৪তম থেকে ২০তম গ্রেডে (মূলত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) কোটা আগেও ছিল, এখনও আছে। প্রতিষ্ঠানভেদে এসব পদের কোটায় কিছু ভিন্নতা আছে।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দেরলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে দেয় সরকার। এবার আন্দোলনকারীরা সব গ্রেডে কোটা সংস্কারের দাবি করছেন। সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সময়ের বিবেচনায় সংস্কার করা উচিত। সংবিধানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থার কথা বলা আছে।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল রোববার প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই অন্যান্য কোটা বজায় রাখতে বলা হয়। সরকার প্রয়োজনে কোটা হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে। 

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংস্কার করা উচিত।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, তরুণ প্রজন্মের জন্য, রাষ্ট্রের বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বড় সমস্যা। তাদের দাবি, সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার করা হোক।

সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, কোটার উদ্দেশ্য হচ্ছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমতল ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করা, নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করা নয়। বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিবেচনা করে প্রতিবন্ধী বাদে অন্য কারও জন্য কোটা প্রয়োজন আছে কিনা– এ প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক সচিব এ কে এম 

আব্দুল আউয়াল মজুমদার। সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, কোটা ব্যবস্থা যৌক্তিক হওয়া দরকার। কোটা একটা পরিবার কতবার ব্যবহার করতে পারবে? পশ্চাৎপদ কোনো পরিবারের একজন একবার চাকরি পেয়ে গেলে তিনি আর পশ্চাৎপদ থাকছেন না। এ ছাড়া পশ্চাৎপদতার আয়ের সিলিং থাকতে হবে। কোটা থাকবে কিন্তু কীভাবে পরিচালিত হবে, এটা নিয়ে অনেক ভাবনার বিষয় আছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022292137145996