সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা

সাবিহা সুমি, আমাদের বার্তা |

সম্পূর্ণ নিজের পরিকল্পনায় একটা অত্যাধুনিক পদ্ধতির বদলি প্রক্রিয়া চালু করা হচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য। দীর্ঘদিন যাবত চালু থাকা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারি কলেজ শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়ার চাইতেও আধুনিক ও অধিকতরো গ্রহণযোগ্য এবং দুর্নীতির সুযোগরুদ্ধ নীতিমালা করা হবে। সরকারের প্রচলিত বিধিবিধান মেনে এমপিওশিক্ষকরা যে যখন যে পদ্ধতিতেই নিয়োগ পাক না কেন সবাইকেই এই বদলির সুবিধা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

এমন দীর্ঘকাঙ্খিত ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন বদলি নীতিমালা নিয়ে গত একমাসের বেশি সময় ধরে ভাবছেন ও বাস্তবায়নের দিকে এগুচ্ছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। গত রোববার রাতে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় প্রিন্ট পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব পরিকল্পনা ও অগ্রগতির  কথা জানান শিক্ষা উপদেষ্টা। শুধু পরিকল্পনা নয়। গত কয়েক সপ্তাহে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বদলিতে দুর্নীতি ঠেকাতে বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এই বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের বার্তাকে বলেন, কোনো সাধারণ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নয়, জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী কাজের জন্য বিশ্বমানের সফটওয়্যার তৈরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করানো হবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়াকরনের সফটওয়্যার।

বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর শিক্ষক এমপিওভুক্ত করে ও সরকারি কোষাগার থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয় মন্ত্রণালয়াধীন তিনটি অধিদপ্তর। আর এসব প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে (প্রভাষক, সহকারি শিক্ষক) নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাই করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। বিগত সরকারগুলোর সময়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, তিনটি শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনটিআরসিএর নির্বাহী ও শীর্ষ কর্তাদের অদক্ষতা ও অবহেলায় বদলি প্রক্রিয়া চালু না হওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে রয়েছেন লাখ লাখ এমপিও শিক্ষক। 

এমন প্রেক্ষাপটে গত আগস্টে গঠিত অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টার দায়িত্ব পান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার অন্যান্য দাবির সঙ্গে বদলির দাবিটাও তাঁর সামনে আনেন ভুক্তভোগীরা।

উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই আমার কাছে উত্থাপিত বেশ কয়েকটি দাবির মধ্যে বদলির দাবিটা খুবই জরুরি মনে হয়েছে। বদলির জন্য হাজার হাজার আবেদনকারীর মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্য ও যুক্তিসঙ্গত দাবিদারকে খুঁজে বের করতে কয়েকটা সূচক ঠিক করা হয়েছে। যেটা পুরোটাই সফটওয়্যারভিত্তিক। বিগত সরকারের আমলে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধু পারস্পরিক বদলির একটা নীতিমালা ও প্রজ্ঞাপন জারি এবং আবেদন শুরু হয়েছিলো। যেটা আমি গত ২ নভেম্বর থেকে সাময়িক স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছি। তবে, সফটওয়্যারভিত্তিক যেটা সবার জন্য করা হচ্ছে সেটার মধ্যে পারস্পারিক বদলির সুবিধাটাও রাখা হবে। এই প্রক্রিয়ায় যদি  ১ শতাংশ শিক্ষকও সুবিধা পান সেটাও তো ভালো।

শিক্ষা উপদেষ্টা আরো বলেন, ইনডেক্সধারী মাদরাসা শিক্ষক শূন্যপদে আবেদনের মাধ্যমে বদলি হয়ে সমপদে/সমস্কেলে স্কুলে যেতে পারতেন। স্কুল থেকে মাদরাসায়ও যেতে পারতেন, সেই সুবিধাও রাখা হবে। তবে, প্রজ্ঞাপনে বলা থাকবে মাদরাসা ও কারিগরি অধিদপ্তরও খুব শিগগিরই বদলির এমন প্রক্রিয়া চালু করবে। 

তিনি বলেন, বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে তিনটি গ্রুপ বিদ্যমান। যুগ যুগ ধরে চলে আসা শুধু বেসরকারি পরিচালনা কমিটির নেওয়া নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরাসরি নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২০ মার্চের পর এনটিআরসিএর প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী সনদ দেখিয়ে নিয়োগের জন্য আবেদন করে বেসরকারি কমিটির নেওয়া নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হওয়া। এবং ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে গেজেট জারি করে শুধু এনটিআরসিএকে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষমতা দেওয়া ও ভাইভা যুক্তসহ পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পর এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ সুপারিশকৃত। বদলির সফটওয়্যার এমনভাবে করা হচেছ যেন আবেদন করামাত্রই একজন বদলিপ্রত্যাশীর সব তথ্য জানা যায় এবং সূচক দিয়ে সর্বোচ্চ যুক্তিসঙ্গতকে চিহ্নিত করা যায়।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, নারী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার থাকবে। তারপর জেলা ও সিনিয়রিটি। মেধার বিষয়টিও থাকতে পারে। খুব শিগগিরিই নীতিমালা জারি হবে।  

উপদেষ্টা আরো বলেন, ভবিষতে তিনটি অধিদপ্তর --মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর মিলে আন্ত:শিক্ষক বদলির একটা সমন্বিত বদলি নীতিমালার চিন্তা যাতে করতে পারে, সে ব্যবস্থাও রাখতে হবে সফটওয়্যারে।

এছাড়া গত ২৭ অক্টোবর থেকে চালু হওয়া অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার মানসিকতাসম্পন্ন প্রার্থীদের দ্রুততার সঙ্গে বাছাই করতে ভাইভায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার নির্দেশনা দেওয়া হবে।

শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘এনটিআরসিএর ইতিহাসে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ভাইভায় প্রতিদিন ডাকা হচ্ছে কম সংখ্যক পরীক্ষার্থী। ভাইভা বোর্ডের সংখ্যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় মাত্র দুটো বেড়েছে। প্রতিদিন দুইব্যাচে একবেলায় ৬/৭শ প্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রায় ছয় মাস লেগে যাবে শুধু ভাইভা নিতেই- এমন অভিযোগ  প্রার্থীদের। আর ভাইভার এই দীর্ঘসূত্রতায় চক্রাকারে পিছিয়ে যেতে পারে চূড়ান্ত বাছাইয়ের ফল প্রকাশ ও নিয়োগের সুপারিশ এবং যোগদান। বয়সের জটিলতায় পড়ে যাবেন অনেক শিক্ষক প্রার্থী। ভাইভা প্রসঙ্গে সরকারের কৌশলটা আসলে কি?

জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা জানান, ভাইভা বোর্ডের সংখ্যা বাড়ানো এবং সরকারি হাইস্কুল ও কলেজে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের বোর্ডে রাখার বিষয়েও বলা যেতে পারে। প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার মানসিকতাসম্পন্ন প্রার্থীদের দ্রুততার সঙ্গে বাছাই করতে ভাইভায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার নির্দেশনা দেওয়া হবে। 

তিনি বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষকরা সেই মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর। শিক্ষক হিসেবে যারা নিয়োগ পাবেন তাদের ব্যক্তিত্ব, সততা, রুচিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। স্বল্প আয়ে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাই তাদের জন্য দুঃসাধ্য, শিক্ষকতায় তারা কিভাবে মনোযোগ দেবেন।  আমরা এসব সমস্যা থেকে উত্তোরণের উপায়ও খুঁজছি।  

প্রসঙ্গত, অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের ভাইভা গত ২৭ অক্টোবর শুরু হয়েছে। মোট দশটি বোর্ডে দুই ব্যাচে প্রায় সাতশ জন করে প্রতিদিন ভাইভায় অংশ নিচ্ছেন। প্রথম ব্যাচের পরীক্ষা সকাল সাড়ে ৯টায় ও দ্বিতীয় ব্যাচের পরীক্ষা বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়।

মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীকে অবশ্যই সব শিক্ষা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট, এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন সনদ ও লিখিত পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড সঙ্গে আনতে হয়। যেহেতু এবার ভাইভার জন্য পৃথক প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি, তাই লিখিত পরীক্ষার প্রবেশপত্রই মৌখিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র হিসেবে গণ্য হয়।

লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মোট ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থী ভাইভায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।  

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা ঢাবিতে ভর্তি আবেদনের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha ঢাবিতে ভর্তি আবেদনের সময় বৃদ্ধি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু - dainik shiksha ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২ হাজার ৯২৩ শিক্ষক - dainik shiksha উচ্চতর স্কেল পাচ্ছেন ২ হাজার ৯২৩ শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027320384979248