সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কষ্টের খবর কেউ রাখে না। প্রতিষ্ঠানগুলোতে কমিটি ও ক্ষেত্রে বিশেষে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষকদের জীবন অতিষ্ঠ। জাতি গড়ার কারিগরি শিক্ষক মানুষের মর্যাদাও পান না।
গতকাল দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রচারিত একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে রাজধানীর ঢাকার একটি নামকরা স্কুলের সভাপতির বিরুদ্ধে টর্চার সেল বানিয়ে শিক্ষক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আওলাদ হোসেন। তিনি রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি পদে রয়েছেন ১০ বছরের বেশি। টর্চার সেল খুলেছেন শিক্ষক নির্যাতন করতে। ৯ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে শিক্ষকরা কান্নাজড়িত কন্ঠে টর্চার সেলে নির্যাতনসহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন সভাপতির বিরুদ্ধে।
একজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, ‘সভাপতি আওলাদ আমাকে মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দিয়ে ভারতে চলে যেতে বলেছে।’ অপর এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানে টর্চার সেল বানিয়েছেন সভাপতি। সেখানে শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষা গালমন্দ করাসহ নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করেন সভাপতি।’
শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র পত্রিকা ‘দৈনিক শিক্ষাডটকমে’ ভিডিওসহ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তবে, দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের মূলধারার জাতীয় ১০টি দৈনিক পত্রিকায় খবরটি আসেনি। দু-একটি জাতীয় পত্রিকায় বিষয়টি দায়সাড়াভাবে উঠে এসেছে।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ইত্তেফাক, জনকণ্ঠ, কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, সমকাল ও সংবাদে টর্চার সেল বানিয়ে শিক্ষক নির্যাতনের বিষয়টি আসেনি। দৈনিক যুগান্তরে প্রতিবেদনটি দায়সাড়াভাবে ১৮ নম্বর পাতায় প্রকাশ হয়েছে।
তবে, ভোরের কাগজ প্রথম পাতায় খুব গুরুত্ব দিয়ে খবরটি প্রকাশ করেছে। সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ জানাই। প্রশ্ন আসে বেশি প্রচারসংখ্যার পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকরা কি টাকাওয়ালা সভাপতিদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে শিক্ষক নির্যাতনের খবর চেপে যান? সম্পাদকদের কাছে আমাদের অনুরোধ বিষয়টি খতিয়ে দেখুন।
শিক্ষক সমাজ বরাবরই অবহেলিত। এতদিন অন্তত গণমাধ্যমগুলো নির্যাতিত নিপিড়িত শিক্ষকদের জন্য কথা বললেও আজ তা অনুপস্থিত দেখছি। পরিশেষে বলতে চাই, ‘শিক্ষকের দেয়া জ্ঞান বিক্রি করে বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ মানুষের পেট চলে।’ তাই কৃতজ্ঞতা থেকে হলেও নির্যাতিত নিপিড়িত শিক্ষকের পাশে দাঁড়ান।
মাজেদুল ইসলাম: লেখক, সভাপতি কর্তৃক নির্যতিত শিক্ষক, নারায়ণগঞ্জ।