সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে স্কুল বন্ধ, বই পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা

ফরিদপুর প্রতিনিধি |

সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বের জেরে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত বামনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় বন্ধ রাখায় নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনেও বই পাননি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তির জন্য আশা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও ফেরত যেতে হচ্ছে। এদিকে সেশন ফি, ভর্তি ফিসহ ৭০০ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। টাকা না দিলে বই মিলছে না শিক্ষার্থীদের। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলটির বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা।

এদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুল বন্ধ করে তালার চাবি নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন সাময়িক বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক। যদিও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাহিদ ও বিদ্যালয়ের সভাপতি কাইয়ূম মোল্যাকে বিদ্যালয়ের মাঠে ও বাইরে ঘুরতে দেখা যায় সোমবার দুপুরে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের অফিসসহ সব কক্ষ তালা দেয়া। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বই নিতে এসে শিক্ষকদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

বই নিতে ও ভর্তি হতে আসা ৮ শ্রেণির জান্নাতুল, সাদিয়াসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বই উৎসবের প্রথম দিন ৫টি বই পেয়েছি। সোমবার স্কুলে এসে দেখি স্কুলের অফিসসহ সব রুম তালা দেয়া। 

৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাকে শুধু বিজ্ঞান বই দিয়েছে। অন্য বই পাইনি।

উপজেলার কদমী গ্রামের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাগর মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার ছেলে হামিম মিয়াকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য এসেছি, কিন্তু শিক্ষকরা না থাকায় ভর্তি না করে ও বই না নিয়েৈই ফিরে যেতে হচ্ছে।

ডহরনগর গ্রামের মোরশেদা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তার জমজ দুই ছেলে রাজু মিয়া ও রবি মিয়া এ বছর ৮ শ্রেণি থেকে পাস করে ৯ম শ্রেণিতে উঠেছে। তাদের দুই ভাইকে ৯শ্রেণীতে ভর্তি ও বই নিতে এসেছি। প্রধান শিক্ষক বলেছেন ভর্তি ও সেশন ফিসহ ৭০০ টাকা লাগবে। টাকা না দিলে ভর্তি হতে পারবে না।

জানতে চাইলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাহিদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বই উৎসবের দিন রবিবার (০১ জানুয়ারি) সকালে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা সকালে স্কুলে এসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বই দিয়ে চলে যান। পরে সভাপতি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কিছু বই দিয়েছেন। সোমবার  ভোরে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক স্কুলের সকল রুম তালা দিয়ে রেখে চলে যান। এ কারণে আমরা কোন শিক্ষার্থীকে বই দিতে পারছি না।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কাইয়ূম মোল্যা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক সকালে স্কুলে এসে কিছু শিক্ষার্থীর কাছে থেকে টাকা নিয়ে বই দিয়েছেন। জানতে পেরে সব শিক্ষার্থীকে টাকা দিতে নিষেধ করেছি। সেশন ফিসহ যাবতীয় ফি পরে নেয়া হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তা মানছেন না। এ বছর সেশন ফিসহ কোন কিছুই নির্ধারণ করা হয়নি। তা ছাড়া গত ৩০ অক্টোবর বিভিন্ন অনিয়মের কারণে প্রধান শিক্ষক শাহজাহান মোল্যাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান মোল্যা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি বই দেয়ার কথা বলে কারো কাছে থেকে টাকা নেইনি। তবে যারা ৫ম শ্রেণি থেকে আমাদের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছেন তাদের কাছে থেকে ভর্তি ফি নেয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো টাকা নেয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। জরুরি কাজে আমি ঢাকাতে এসেছি। তবে, স্কুলের চাবি আমার কাছে নেই।

বরখাস্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ তিনজন সদস্য। কিন্তু, স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির অন্য ৯ সদস্যই আমার পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে, আমি কিভাবে বরখাস্ত হলাম, আমি সরকারিভাবে বৈধ।

বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্কুলটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে একটু বিরোধ রয়েছে। যা ঢাকা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত জানেন। আমরা বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি। অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে আমি  মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) স্কুলটিতে যাবো।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এছাড়া এব্যাপারে কোনো শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072259902954102