সমঝোতার ভিত্তিতে চলছে দুই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এইচএসসি পরীক্ষায় নিজ কলেজের পরীক্ষার্থীদের ভালো ফল নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সমঝোতা করে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার দুটি কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মধুপুর সরকারি কলেজের শিক্ষকরা বিপরীত কলেজের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন না। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় এমন সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেছে।  

মধুপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিলে ওই সরকারি কলেজের শিক্ষকরা পরীক্ষা কক্ষে কঠোর থাকেন। এ কারণে বেসরকারি শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করতে পারে না বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। তাই, মধুপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রের বদলে পার্শ্ববর্তী কোনো কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের পাঠানোর ব্যবস্থা করতে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেছিল শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই আবেদনে সম্মতি দেননি বোর্ড চেয়ারম্যান। তাই, রাজনৈতিকভাবে সমঝোতা করে ও প্রশাসনের সহায়তায় পরীক্ষার ব্যবস্থা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, মধুপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শোলাকুড়ি কলেজ ও ভাইঘাট আইডিয়াল কলেজের পরীক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে মধুপুর সরকারি কলেজ, মহিষমারা কলেজ, চাপড়ী বহুমুখী গণ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আউশনারা কলেজ ও মধুপুর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সমঝোতা অনুযায়ী শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কক্ষে মধুপুর সরকারি কলেজের কোনো শিক্ষক কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন না। অন্যদিকে, মধুপুর সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের কক্ষে শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন না।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় এমন সমঝোতা করে পরীক্ষা পরিচালনা করছে কলেজ দুটি। গত ১ এপ্রিল (সোমবার) থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রথম দিনে বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষায় মধুপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে দেখা যায়নি প্রশাসনিক কোনো কর্মকর্তাকে।

গত বছর শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল মধুপুর সরকারি কলেজে। পরীক্ষার ফল আশানুরূপ হয়নি শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের। মধুপুর কলেজে কেন্দ্র হওয়ায় ফল খারাপ হয় বলে ধারণা করে মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ মার্চ মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান মধুপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোনতাজ আলী এবং শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বজলুর রশিদ খানকে নিয়ে সভায় বসেন। সভায় দুই কলেজে ‘সমঝোতা’ করে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে ‘অলিখিত চুক্তি’ হয়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে সূত্র। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মধুপুর সরকারি কলেজের শিক্ষকরা তাদের কেন্দ্রে শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কক্ষে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। অপরদিকে, শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাদের কলেজ কেন্দ্রে মধুপুর সরকারি কলেজের পরীক্ষার্থীদের কক্ষে দায়িত্ব পালন করবেন না। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম দিনের পরীক্ষায় প্রশাসনিক কোনো কর্মকর্তাকে মধুপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরিদর্শনে আসতে দেখা যায়নি। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষায়ও মধুপুর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে আসেননি কোনো কর্মকর্তা। আর দুই দিনের পরীক্ষায়ই শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক মধুপুর সরকারি কলেজে গিয়ে কোন কক্ষে কোন কলেজের শিক্ষক পরিদর্শনের দায়িত্বে রয়েছেন তা তদারকি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, এ বিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলুন। তিনি কমিটির সভাপতি। আমার উপজেলায় এইচএসসির কেন্দ্রে নকল মুক্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আমি এতটুকু বলতে পারছি। 

মধুপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিমা আহমেদ পলি দৈনিক শিক্ষার কাছে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কোনো শিক্ষক যাতে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার না করতে পারেন সে জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন কক্ষে কোন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করবেন তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।  রবি ও সোমবারের পরীক্ষায় ইউএনও মধুপুর সরকারি কলেজে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কজে ব্যস্ত থাকায় আমি গতকাল যেতে পারিনি। আজকে আবহাওয়া খারাপ ছিল, তাই আজও যাওয়া হয়নি।    
   
মধুপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোনতাজ আলী দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, অভিযোগটি ভিত্তিহীন। এমন কোনো বিষয়ে সভা হয়নি। ২৫ মার্চের সভায় সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মধুপুর কলেজ কেন্দ্রে শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কক্ষে কোন কলেজের শিক্ষকরা পরিদর্শন করছেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মোনতাজ আলী হকচকিয়ে যান। উত্তরে তিনি বলেন, অন্যান্য কলেজের শিক্ষকরা পরিদর্শন করছেন। মধুপুর সরকারি কলেজের শিক্ষকরা শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কক্ষে পরিদর্শন করছেন না। শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে কক্ষ পরিদর্শনের বিষয়টি যাচাই করছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মোনতাজ আলী জানান, সব কলেজের শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। খোঁজখবর নিতে হয়তো এসেছিলেন।
     
এ বিষয়ে শহিদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বজলুর রশিদ খানের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন ধরে একবার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, স্যার ব্যস্ত আছেন পরে কথা বলবেন। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি অধ্যক্ষ বজলুর রশিদ খান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051500797271729