সমন্বয়হীতায় পাঠ্যবইয়ে ভুল, পাঠ নির্বাচনেও ছিল প্রাসঙ্গিকতার ঘাটতি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

যথাযথ সময় নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তা, বই লেখক এবং মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছিল সমন্বয়হীতা। পাঠ নির্বাচনেও ছিল প্রাসঙ্গিকতার ঘাটতি। দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভাবনায় ছিল না দেশের সংস্কৃতি, সমাজ ও ধর্মীয় অবস্থা। পাঠ্যবইয়ের এসব ভুল চিহ্নিত করেছে তা সংশোধনে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে এই কমিটি। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী বিতর্কিত পাঠ বাদ দিয়ে সংশোধনী তৈরি করছে এনসিটিবি। সংশোধিত পাঠ ঈদের ছুটির পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছে যাবে।

কমিটির এক সদস্য বলেন, পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির পর ভুল-ত্রুটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে মনে হয়েছে বইয়ের কার্যক্রম কিছুটা অগোছালো ছিল। সময় এবং প্রস্তুতির অভাব ছিল এনসিটিবির। তিনি বলেন, এনসিটিবির বিশেষজ্ঞ, লেখক, মুদ্রাকর এই তিন ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ছিল। বইয়ে পাঠ নির্বাচনেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকতার ঘাটতি লক্ষ করা গেছে। সর্বনাম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়নি। বিশেষ করে ইংরেজি বইয়ে নির্দেশনার ক্ষেত্রে বাংলা অনুবাদ দেওয়া হয়েছে। বিদেশি ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি জুতসই নয়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো পাঠ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতার অভাব ছিল। এ দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, সমাজ ও ধর্মীয় অবস্থা মাথায় রাখা হলে হয়তো এমনটি ঘটত না। এসব বিষয় তারা সুপারিশ করেছেন।

বিশেষজ্ঞ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম বলেন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন, ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধান এবং অনুশীলনসহ মোট চারটি বই আমাদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়। এ চারটি বই নিয়ে গণমাধ্যামে প্রকাশিত সংবাদ, সুধীজনের পর্যবেক্ষণ ও আপত্তি থাকলে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে ভুল থাকলে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়।

আব্দুল হালিম বলেন, আমাদের অতীতের শিক্ষাক্রমের চাইতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পড়ার সঙ্গে সেগুলো মূল্যায়ন করা শিখবে। উপস্থাপন করা শিখতে পারবে। তবে কিছু অধ্যায় আগের মতো রাখা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীর অ্যাকটিভিটিস রাখা হয়নি

সেগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করতে সুপারিশ করা হয়েছে। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে ভালো উপস্থাপন করা হলেও অনুশীলন বইটিকে মূল রেখে অন্যটিকে রেফারেন্স হিসেবে রাখতে বলা হয়েছে। এর বাইরেও বির্বতনবাদ অধ্যায় বাদ দেওয়াসহ নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনসহ কমবেশি ৩০টি সুপারিশ করেছেন তারা।

সংশোধন প্রসঙ্গে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ভুল কোনো তথ্য দিয়ে বই তৈরি করা হয়েছে- এ ধরনের কথা কেউ বলেনি। একেবারে নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক কোথাও কেউ করতে পারেনি। নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে গেলে পৃথিবীর সব দেশে এ ধরনের কথাবার্তা ওঠে। নতুন বই যখন হয় তখন সেটি পরীক্ষামূলক সংস্করণ হিসেবে যায়। পরে সেগুলো সংশোধন করা হয়েছে।

মশিউজ্জামান জানান, রিভিউ কমিটির সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের ২৬টি জেলার ৫৩টি বিভিন্ন ধরনের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মতামত নেয়া হয়েছে। পরিমার্জন করে বইগুলো সংশোধনের কাজটি শেষ পর্যায়ে। এখন সাজানো গোছানোর কাজ চলছে।

পবিত্র রমজান মাসেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংশোধনীগুলোর সফট কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা তা হাতে পাবে ছুটি শেষে ঈদের পর।

বিতর্কের সৃষ্টির পর গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেয় এনসিটিবি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫ লাখ - dainik shiksha বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫ লাখ স্কুল-কলেজ ভবন নির্মাণে ৫ শতাংশ কমিশন নিতেন দীপু মনির ভাই টিপু - dainik shiksha স্কুল-কলেজ ভবন নির্মাণে ৫ শতাংশ কমিশন নিতেন দীপু মনির ভাই টিপু বন্যার্তদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা পাঠাবেন যেভাবে - dainik shiksha বন্যার্তদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে সহায়তা পাঠাবেন যেভাবে ঢাবি অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজে ভর্তির টাকা জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha ঢাবি অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজে ভর্তির টাকা জমা দেয়ার সময় বৃদ্ধি নতুন শিক্ষাক্রম সংস্কার নয়, বাতিল চাই - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম সংস্কার নয়, বাতিল চাই দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044550895690918