কলেজ আত্তীকরণের পরস্পরবিরোধী বিধিমালাসমন্বয়হীনতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বেসরকারি কলেজে জনবল-কাঠামোর ‘শিক্ষাগত যোগ্যতার’ সঙ্গে সরকারি কলেজে আত্তীকরণ বিধিমালার সমন্বয় নেই। অন্যদিকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে কলেজে জনবল আত্তীকরণের জন্য যে বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, তার সঙ্গে সমন্বয় বা যোগসূত্র নেই ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের বিধিমালার। এসব কারণে আত্তীকরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বহু শিক্ষক। বঞ্চিত হওয়ায় এসব শিক্ষক এখন বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন। এসব শিক্ষকের বক্তব্য, ‘প্রতিষ্ঠান সরকারি হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা লাভবান হন। কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’ সোমবার (৫ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন নিজামুল হক।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বেসরকারি কলেজে জনবল নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পৃথক জনবল কাঠামো রয়েছে। জনবল-কাঠামোতে পদের নাম কী হবে, একটি প্রতিষ্ঠানের কোন পদে কত জনবল থাকবে এবং পদে নিয়োগের যোগ্যতা কী হবে তা-ও নির্ধারণ করা থাকে। শিক্ষকরা সেই বিধিমালার আলোকেই নিয়োগপ্রাপ্ত হন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের বেসরকারি কলেজের জন্য যে জনবল-কাঠামো রয়েছে, সেখানে প্রভাষক পদে তৃতীয় বিভাগপ্রাপ্ত ও পাসকোর্সে উত্তীর্ণরা চাকরিতে নিয়োগের যোগ্য হবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এই জনবল-কাঠামোর আলোকে অনেক শিক্ষক বেসরকারি কলেজে চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু এর আগে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি কলেজে আত্তীকরণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, সেখানে প্রভাষক পদে তৃতীয় বিভাগপ্রাপ্ত ও পাসকোর্সে উত্তীর্ণদের আত্তীকরণের সুযোগ রাখা হয়নি। এই বিধিমালায় কলেজের শিক্ষকদের ক্যাডার মর্যাদা দেয়া হয়। বেসরকারি কলেজে ‘অধ্যক্ষ’দের ‘প্রভাষক’ হিসেবে আত্তীকরণের সুযোগ রাখা হয়। তবে পদগুলোকে ক্যাডার মর্যাদা দেয়া হয়। তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত ও পাসকোর্সে উত্তীর্ণরা এই বিধিমালার আলোকে আত্তীকরণ থেকে বঞ্চিত হন।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে আত্তীকরণের জন্য নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। শিক্ষা ক্যাডার শিক্ষকদের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই বিধিমালায় কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার হিসাবে আত্তীকরণের সুযোগ দেয়া হয়। এতে আশার আলো দেখতে পান আত্তীকরণ-বঞ্চিত শিক্ষকরা। এই বিধিমালায় ঐ সব শিক্ষকের আত্তীকরণের জন্য একটি ধারা যুক্ত আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সংশ্লিষ্ট কোনো কলেজের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীর চাকরি আত্তীকরণযোগ্য না হইলে এবং তাহাদের চাকরি এই বিধিমালার অধীন আত্তীকরণযোগ্য হইলে, এই বিধিমালার বিধান অনুযায়ী তাহাদের চাকরি আত্তীকরণ করা যাইবে।’

পারভীন নামে এক চাকরিপ্রার্থী জানান, এই ধারা অনুযায়ী বঞ্চিতরা চাকরিযোগ্য হবেন। যেহেতু এবার আত্তীকরণ হবে নন-ক্যাডার হিসেবে, তাই তৃতীয় শ্রেণি ও পাসকোর্সের ডিগ্রিদের এই ধারার মাধ্যমে সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেই আশায় এইসব শিক্ষক নতুন করে মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন। কিন্তু বিধিমালায় সুযোগ থাকলে বাস্তবে সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলছেন, এই ধারা স্থগিত রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। যার স্বাক্ষরে ওই বিধিমালা, তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এই ধারার বাক্যটি কীভাবে কোথা থেকে এসেছে, তা খতিয়ে দেখছি।’ এই ধারার আলোকে বঞ্চিতদের আত্তীকরণের সুযোগ নেই বলে তিনি জানান। এই ধারা বিধিমালা থেকে বাদ দেয়ারও ইঙ্গিত দেন তিনি।

সূত্র জানিয়েছে, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের বিধিমালায় অধ্যক্ষরা দায়িত্ব হারাবেন এবং ক্যাডার পদ হিসেবে প্রভাষক পদে আত্তীকরণ হবেন। কিন্তু ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের বিধিমালায় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষরা স্বপদে থাকবেন এবং নন-ক্যাডার হিসেবে আত্তীকরণ হবেন। ২০০০ বিধিমালার বঞ্চিত শিক্ষকদের ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের বিধিমালায় সুযোগ দেওয়া হলে বঞ্চিতদের অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। একই কলেজে বঞ্চিতরা অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ থাকবেন—এটা চাইছেন না অন্য শিক্ষকরা। এ কারণে বঞ্চিতদের বঞ্চিত রাখার দাবিতে একটি পক্ষ জোরালো চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশের ৪২টি কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষক বঞ্চিত রয়েছেন বিধিমালা ও জনবল-কাঠামোর সমন্বয়হীনতার কারণে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028750896453857