সমস্যাক্রান্ত শিক্ষক সমাজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক। মা-বাবা জন্ম দেয়ার পর মূলত শিক্ষকের হাতেই গড়ে ওঠে সন্তান। ছাত্রকে মানুষ করার জন্য শিক্ষকের চেষ্টার অন্ত থাকে না। একজন শিক্ষক কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে তার দায়িত্বে অবহেলা করেন না বলেই বিশ্বাস করি। যদিও গুটিকয়েক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে নানা সময়। কিন্তু তারা বিশাল শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন না অবশ্যই। শনিবার (৫ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও)

নিবন্ধে আরও জানা যায়, প্রতিবছর ৫ অক্টোবর সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন করা হয়। এদিন শিক্ষকদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয় বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়ামে। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই শিক্ষকের সম্মান রয়েছে। রয়েছে তাদের জন্য পর্যাপ্ত সম্মানী, নিরাপত্তা ও আবাসনের সুব্যবস্থা। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত শিক্ষকরা সেভাবে কাঙ্ক্ষিত সম্মানী ও অন্যান্য সুবিধাদি পান না। আমি মনে করি, উপযুক্ত সম্মান ও সম্মানী পাওয়া শিক্ষকদের অধিকার। এ ক্ষেত্রে বৈষম্য থেকে গেছে। বিভিন্ন সময় এ বৈষম্যসহ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষকরা রাস্তায়ও নামেন। সরব থাকেন প্রতিবাদ, বিক্ষোভে। সরকারকে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে ভাবার অনুরোধ জানাই। শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কখনও অস্বীকার করেন না ঠিকই; কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নেন না।

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাতে হাজার, লক্ষ শিক্ষক শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। ছাত্রদের শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন। আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাদের মানুষ করার জন্য। এরপরও নানা সময় শিক্ষকরা বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হন। সম্মুখীন হন নানা প্রতিকূলতার। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন সমাজের কিছু দুষ্ট লোক। তবে তারা সংখ্যায় অতি নগণ্য।

মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেই ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ দেয়ার ঘটনাটি আমরা সবাই জানি। এ সম্পর্কিত একটি কবিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাংলা পাঠ্যপুস্তকে রয়েছে। সম্রাট তার পুত্রের শিক্ষককে যেভাবে মর্যাদা দিয়েছিলেন সে ধরনের মর্যাদা কি এখন আছে?

শ্রদ্ধাবোধ কমে এলেও সমাজে শিক্ষকদের একটি সম্মানজনক স্থান রয়েছে। আগের দিনে মানুষ শিক্ষকদের যথোপযুক্ত সম্মান করতেন। নিজের সন্তানকে মানুষ করতে শিক্ষকের হাতে তাকে (সন্তানকে) তুলে দিতেন। এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ শিক্ষকদের সম্মানের আসনে বসান, ছুটে যান নানা সমস্যায়। সমাজে আলো ছড়িয়ে দিতে শিক্ষকরা চেষ্টারত আছেন। পর্যাপ্ত সুবিধাদি না পেলেও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। থেমে নেই তাদের কর্মতৎপরতা। দেশে প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষাগুলোর যে আশা জাগানিয়া ফল, তার কারিগর কিন্তু এ শিক্ষক সমাজ। তাদের প্রচেষ্টায়ই এ সফলতা।

দেশের সব স্তরে যারা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তারা সবাই কোনো-না-কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের ছাত্র। সে হিসেবে দেশের উন্নয়নের পেছনেও রয়েছে শিক্ষকদের অবদান। শিক্ষকরা বছর বছর দেশের জন্য তৈরি করছেন মেধাসম্পদ। যে সম্পদ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সহায়ক। শিক্ষকদের প্রতি সবার উপযুক্ত শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। এ শ্রদ্ধাবোধের মাত্রা আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন উবে যাচ্ছে। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোলেই দেখা যায়, অনেক ছাত্র তার শিক্ষককে যথাযথ সম্মান দেয় না। এমনকি সালামটুকুও দিতে চায় না; যা আমাদের জন্য অবশ্যই চিন্তার বিষয় বৈকি! হ্যাঁ, দেখা যায় বেশকিছু শিক্ষক তাদের দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকেন কম। এ ধরনের মন-মানসিকতা অবশ্যই পরিহার করা উচিত। এরপরও আমি বলব, দেশের শিক্ষকদের বেশিরভাগই তাদের দায়িত্ব পালনে অটল থাকেন। অব্যাহত রাখেন মানুষ গড়ার প্রচেষ্টা। শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠনপূর্বক উপযুক্ত সম্মানীর ব্যবস্থা করা, নানা সুবিধাদি বৃদ্ধি ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। যথাযথ প্রশিক্ষণ, আবাসন ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধা বাড়ানো উচিত। শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালনে আরও সচেষ্ট হবেন- এ আশা মানুষ করতেই পারে। শিক্ষকদের সম্মান ও সম্মানীর যেন কোনো ঘাটতি না থাকে সে ব্যাপারে সবার সচেতনতা কাম্য।

লেখক: কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম, সহকারী শিক্ষক, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002269983291626